পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় জেরে সৌদি আরব সফর কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে ভারতে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য আধিকারিকেরা। মঙ্গলবার রাতে সৌদির রাজার নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়েই নয়াদিল্লির বিমান ধরেন মোদী। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “সৌদি আরব সফর শেষ করে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
আরও পড়ুন: জঙ্গিদের ছাড়া হবে না, সফর কাটছাঁট তড়িঘড়ি দেশে মোদী; আজ মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠক
সৌদি থেকেই মোদী এক্সে লেখেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এই জঙ্গিহানার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের সমবেদনা জানাই। প্রার্থনা করি, আহতেরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। সব রকমের সাহায্য করা হবে।’’ তার পরেই প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জঙ্গিদের। তাঁর কথায়, ‘‘এই জঘন্য অপরাধের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের রেয়াৎ করা হবে না! তাঁদের অশুভ লক্ষ্য চরিতার্থ হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের পণ দৃঢ়। এটা আরও কঠিন হবে।’’
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। পুলওয়ামা হামলার পর এটাই ভারতের বুকে সবথেকে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই ঘটনার নিন্দায় গোটা বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সবরকম সাহায্যে আমেরিকা প্রস্তুত।
২৬ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০ জন। কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা থেকে আসা বহু পর্যটক সেখানে ছিলেন। পর্যটকদের কেউ কেউ জানান, সেনার পোশাকে এসে তাঁদের থেকে পরিচয় জানতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। মুসলিম না হওয়ায় তাঁদের গুলি করা হয়! এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্বজুড়ে কার্যত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: পহেলগাঁও পৌঁছলেন শাহ, জঙ্গি হামলায় মৃত বেড়ে ৩০, মৃত্যু ২ বিদেশির
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছিলেন। তিনি ভারতের পাশে আছেন। জম্মু-কাশ্মীরে যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা করেছেন ট্রাম্প। এও জানিয়েছেন, যে কোনও রকম সাহায্যের জন্য আমেরিকা ভারতের পাশে রয়েছে। ট্রাম্পের বার্তা, জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারত-আমেরিকা মিলিতভাবে লড়াই করবে।
বর্তমানে সৌদি আরব সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে কাশ্মীরের ঘটনার খবরে তিনি স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগে। তাই সেই সফর কাটছাঁট করে বুধবারই দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরবে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ করেননি তিনি। তাঁর সফরের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা ছিল, তবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার কারণে তা বাতিল হয়েছে।
তবে শুধু আমেরিকা নয়, রাশিয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরব, ইতালি, ইজরায়েল, ইরান, শ্রীলঙ্কা… সবই দেশই এই জঙ্গি হামলার ঘটনার ব্যাপক নিন্দা করেছে। তাঁদের মূল বক্তব্য একটাই, কোনও মতেই জঙ্গি হামলার মতো ঘটনা প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। তাঁরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে এবং ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সম্মিলিতভাবে জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে কাজ কররা আহ্বান জানান হয়েছে।