সৌরভ দত্ত, কলকাতা
কুশল দাশগুপ্ত , শিলিগুড়ি
আজ থেকে ২০২৫ এর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এবছর মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৬০৩ জন ছাত্র এবং ছাত্রীর সংখ্যা হল ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৫০ জন। এবার মোট ২,৬৮৩টি স্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশজুড়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে স্কুলছুট বাড়লেও বাংলায় দেখা গেল উল্টো ছবি। এবছর মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২ হাজার বাড়ল। ফলে আজ থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিকে পরীক্ষা দিতে চলেছে মোট ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫৩ জন পরীক্ষার্থী। গতবছর এই সংখ্যাটি ছিল ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৬৩৬। এবারে মাধ্যমিকেও ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। তবে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও এ বছর অবশ্য প্রধান ভেন্যুর সংখ্যা কমানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: Today’s Horoscope: শুক্লা ত্রয়োদশীতে প্রদোষ ব্রত-প্রীতি যোগ; সপ্তাহের প্রথম দিন, কেমন কাটবে আপনার?
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৬০৩ জন ছাত্র এবং ছাত্রীর সংখ্যা হল ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৫০ জন। এবার মোট ২,৬৮৩টি স্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তারফলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের সংখ্যা বেড়েছে।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণায়। এই জেলা থেকে এবার মাধ্যমিক দিতে চলেছে ৯৩,০৬৮ জন। এছাড়াও, উত্তর ২৪ পরগনায় ৮৮,৯৫০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৮,৭৫৪ জন, যা সবচেয়ে বেশি। এই জেলায় ৮৪,২২৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। নানা সমীক্ষা অনুযায়ী, এই জেলাগুলিতেই বাল্য বিবাহ এবং স্কুলছুট বেশি। এর পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, পুরুলিয়া এবং নদিয়াতে পাঁচ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী বেড়েছে।তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও প্রধান ভেন্যুর সংখ্যা এবার কমিয়ে ৯৪৭ করা হয়েছে। গত বছর তা ছিল ৯৮৬টি। যদিও, সাব-ভেন্যুর সংখ্যা এবার বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, মাধ্যমিকে টোকাটুকি রুখতে এবার কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাছাড়া প্রশ্ন ফাঁস রুখতেও কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গতবছর প্রশ্নফাঁসের চেষ্টায় জড়িত অভিযোগে মালদা জেলা থেকে ৪০-৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফলে এই জেলায় বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। তাছাড়া, প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরে কোনও পরীক্ষার্থীর কাছ মোবাইল বা ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম পাওয়া গেলে সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করা হবে। এছাড়াও, সিভিক ভলান্টিয়ারদের পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে ডিউটি দেওয়া হবে না। তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ডিউটি দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: Bangladesh: বাংলাদেশের গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ৪০ নেতাকর্মী আটক
অন্যান্য শহরের মতো প্রস্তুত হচ্ছে শিলিগুড়িও। শিলিগুড়ির সব পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।চলছে টহলদারি, যাতে কোন সমস্যা না ঘটে সেজন্য আজ রাত থেকে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়ন করা হয়েছে।পরীক্ষার্থীদের যেতে আসতে এবং রাস্তায় যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেটা দেখা হচ্ছে। শিলিগুড়ি সাতটি কেন্দ্রে ছেলেদের এবং নটি কেন্দ্রে মেয়েদের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট বসেছে। সব কেন্দ্র গুলিতে গত একমাস ধরে চলছে আগাম প্রস্তুতি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তৈরি হয়ে গেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও একটা উত্তর জানাও আছে। শিলিগুড়ি সব কেন্দ্র আলাদা করে থাকবে পুলিশি ব্যবস্থা। যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। সব কেন্দ্রে থাকবে ওষুধ এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা।
এক দিকে পর্ষদ এবং কলকাতা পুলিশের তরফে তাদের জন্য চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। অন্য দিকে, পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে রাস্তায় নামানো হচ্ছে অতিরিক্ত সরকারি বাস। অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে তৈরি থাকছে হাসপাতালগুলিও।
পরীক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। যা সচল থাকবে ২৪ ঘণ্টাই। সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে যে নম্বরগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে, সেগুলি হল— ০৩৩ ২৩২১ ৩৮১৩, ০৩৩ ২৩৫৯ ২২৭৭ এবং ০৩৩ ২৩৩৭ ২২৮২। পর্ষদের কন্ট্রোল রুমের কলকাতার আঞ্চলিক অফিসে ০৩৩ ২৩২১ ৩৮১১, বর্ধমানের আঞ্চলিক অফিসে ০৩৪ ২২৬৬ ২৩৭৭, মেদিনীপুরের আঞ্চলিক অফিসে ০৩২ ২২২৭ ৫৫২৪ এবং উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অফিসে ০৩৫ ৩২৯৯ ৯৬৭৭ বা ৮২৪০৭৫৬৩৭১ নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে। পরীক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকেরা সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্ত সহযোগিতা পাবেন বলে জানিয়েছে পর্ষদ।
অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের তরফেও চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। পরীক্ষার্থীরা যে কোনওরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে পুলিশের সাহায্য নিতে পারবে ৯৪৩২৬১০০৩৯ নম্বরের মাধ্যমে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরিষেবা দেবে রাজ্যের সরকারি বাসগুলি। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম এবং ট্রাম সংস্থার বিভিন্ন বাস শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড থেকে চালানো হবে। যে সমস্ত রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশি, সেখানে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট এবং ৯টা ১৫ মিনিট— এই দু’দফায় বাস ছাড়ার ব্যবস্থা থাকবে। অন্য জায়গায় বাস ছাড়বে সকাল ৯টায়। সংশ্লিষ্ট বাসগুলিতে ঝোলানো থাকবে ‘পরীক্ষা স্পেশ্যাল’ বোর্ড। বাসে অন্য যাত্রীরা উঠতে পারলেও অগ্রাধিকার পাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাই।
পরীক্ষার শেষেও যাতে পরীক্ষার্থীরা ঠিক ভাবে বাড়ি ফিরতে পারে তার জন্য দুপুর ২টো ১৫ মিনিট এবং দুপুর ২টো ৪৫ মিনিটে বিভিন্ন প্রান্তিক বাসস্ট্যান্ডগুলি থেকে ফের দু’দফায় বাস ছাড়বে। বাস চলবে সরশুনা, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুর, যাদবপুর এবং ব্যারাকপুর থেকে হাওড়াগামী রুটে। এ ছাড়াও গড়িয়া থেকে দেশপ্রিয় পার্ক হয়ে ৫ নম্বর বাস এবং টালিগঞ্জ হয়ে ৭ নম্বর বাস হাওড়া অভিমুখে চালানো হবে। পাশাপাশি, বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে এসপ্লানেড এবং ডানলপ থেকে বালিগঞ্জের মধ্যেও বাস চলাচল করবে। অন্য দিকে, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের তরফে দক্ষিণেশ্বর থেকে এসপ্লানেড, কুঁদঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, কাঁকুড়গাছি থেকে বেহালা, নিউ টাউন থেকে শিয়ালদহ এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে বাস চালানো হবে।
এ ছাড়া, টালিগঞ্জ থেকে ঘটকপুকুর, হাওড়া স্টেশন থেকে খিদিরপুর হরিমোহন ঘোষ কলেজ এবং আমতলা, বারাসত থেকে আমতলা এবং ব্যারাকপুর, পার্ক সার্কাস থেকে ডানকুনি, বেলগাছিয়া থেকে বিবাদি বাগ-টিকিয়াপাড়া রুটে বাস চালাবে কলকাতা ট্রাম সংস্থা। একই সঙ্গে, শ্যামবাজার এবং গড়িয়াহাট থেকে এসপ্লানেড রুটে থাকছে ট্রাম পরিষেবা।
পরীক্ষার দিনগুলিতে বেসরকারি বাসের পরিষেবা ঠিক রাখার পাশাপাশি রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ নজর দেবে প্রশাসন। সরকারি পরিবহণ নিগমের যে সব কর্মী বাস পরিষেবা সচল রাখার সঙ্গে যুক্ত, এই ক’দিন তাঁদেরও ছুটি বাতিল করা হয়েছে।