প্রতিদিন ঘুমোনো, খাওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ নিয়মিত অন্তর্বাস বদলানো। এটা কমবেশি আমাদের সকলের জানা। সে পুরুষ হোক বা মহিলা, নিয়ম করে অন্তর্বাস বদলানোটা প্রয়োজনীয়। অন্তর্বাস বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও একেক জনের একেক রকম পছন্দ থাকে। কেউ খুব টাইট ফিটিং অন্তর্বাস পছন্দ করেন। কেউ পছন্দ করেন একটু ঢিলেঢালা অন্তর্বাস। কিন্তু বিষয়টাকে যতটা হালকা ভাবে নেওয়া হয় ততটাও কিন্তু হালকা নয়।
বিশেষজ্ঞরা কিন্তু জানাচ্ছেন, ভুল অন্তর্বাস বেছে নেওয়ার কারণে বড় বিপদে পড়তে পারেন পুরুষরা। গবেষণা বলছে এমনকি পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ভুল অন্তর্বাস। হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ ঢিলেঢালা-ফিট বক্সার বা শর্টস পরেন, তাঁদের শুক্রাণুর ঘনত্ব টাইট অন্তর্বাস পরা পুরুষদের তুলনায় বেশি।
ওই গবেষণা অনুসারে যেসব পুরুষ টাইট-ফিটিং অন্তর্বাস পছন্দ করেন তাঁদের মধ্যে তুলনায় ফলিকেল-উত্তেজক হরমোনের মাত্রাও বেশি ছিল। যেহেতু এই হরমোন শুক্রাণু উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, গবেষকদের অনুমান এগুলি অণ্ডকোষকে শুক্রাণু উৎপাদনে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে। সেক্ষেত্রে শুক্রাণুর ঘনত্ব কম হলেও বেশি পরিমাণে শুক্রাণু উৎপাদন খানিকটা হলেও সেই ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন: দাড়ি কাটার পরেই ত্বকে জ্বালা ভাব! কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে উপকার পাবেন
হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গবেষণা বিজ্ঞানী লিডিয়া মিঙ্গুয়েজ-আলারকন জানান, অন্তর্বাসের পছন্দ শুক্রাণু উৎপাদনকে প্রভাবিত করে কিনা তা বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণার বিষয়। এই গবেষণাতে উঠে এসেছে কী ভাবে পুরুষের অন্তর্বাস নির্বাচন তার অণ্ডকোষের কার্যকারিতাকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে।
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন অনুসারে, বীর্য বিশ্লেষণ (স্পার্ম অ্যানালিসিস) হল একজন পুরুষের বীর্যপাতের একটি মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা। পরীক্ষার পরামিতিগুলির মধ্যে রয়েছে বীর্যের পরিমাণ (অর্গ্যাজমের সময় একজন পুরুষ কতটা তরল বীর্যপাত করে), শুক্রাণুর সংখ্যা (প্রতি নমুনায় মোট শুক্রাণুর সংখ্যা), শুক্রাণুর ঘনত্ব (প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা), শুক্রাণুর গতিশীলতা (চলমান শুক্রাণুর সংখ্যা), এবং শুক্রাণুর রূপবিদ্যা (শুক্রাণু সঠিক আকার এবং আকৃতির কিনা)।
মিঙ্গুয়েজ-আলার্কন জানান, যদিও বীর্য নমুনার বিশ্লেষণ পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের প্রথম ধাপ। এটি চূড়ান্ত নয়। এই গবেষণার জন্য, তিনি এমন পুরুষদের বেছে নেন যাঁরা ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। ১৮ থেকে ৫৬ বছর বয়সী, প্রতিটি পুরুষ বীর্য এবং রক্তের নমুনা উভয়ই সরবরাহ করেন। তাদের অন্তর্বাস সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেন।
৬৫৬ জন পুরুষের মধ্যে, অর্ধেকেরও বেশি জানান যে তাঁরা সাধারণত বক্সার শর্টস পরতেন। এই সব পুরুষদের মধ্যে ক্লিঙ-ফিট অন্তর্বাস পরা, গরম জলে স্নান করার ধাত বেশি ছিল। অনান্য অভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপ সব বিবেচনা করার পর গবেষকরা দেখেন, ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরা পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর ঘনত্ব ২৫% বেশি, শুক্রাণুর সংখ্যা ১৭% বেশি, গতিশীল শুক্রাণু ৩৩% বেশি এবং ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের মাত্রা ১৪% কম ছিল।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আসলে পুরুষদের যৌনাঙ্গের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল তাপমাত্রা। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়। কিন্তু যৌনাঙ্গ শরীরের বাইরে থাকায় তার তাপমাত্রা সাধারণ নিয়মে খানিকটা কম হয়। যদিও এই দুই রকমের অন্তর্বাস গ্রুপের মধ্যে ডিএনএর কোনও ক্ষতি হয় বা অন্যান্য প্রজনন হরমোনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয় এমনটা জানা যায়নি।
প্রতিদিন অন্তত দুইবার অন্তর্বাস বদলানো উচিত—একটি স্বাস্থ্যবিধি, যেটা দাঁত ব্রাশ করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর্বাস পাল্টানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই এ নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল এক্সেলেন্স একটি লাইফস্টাইল গবেষণায় জানিয়েছে, প্রায় ২০০০ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের ৪৫ শতাংশই নিয়মিত অন্তর্বাস বদলান না—বিশেষ করে শীতকালে।
আরও পড়ুন: দাড়ি কাটার পরেই ত্বকে জ্বালা ভাব! কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে উপকার পাবেন
চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তর্বাস নিয়ে অসতর্কতা শরীরে দুর্গন্ধ, ইনফেকশন, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে পুরুষত্বহীনতার মতো সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
জাঙ্গিয়া ব্যবহারে করণীয়:
সব সময় পরিষ্কার ও সুতির, ঢিলাঢালা জাঙ্গিয়া ব্যবহার করুন
হালকা রঙের অন্তর্বাস ব্যবহার করুন, যাতে ময়লা ধরা পড়ে
আঁটসাঁট জাঙ্গিয়া এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে
ঘামেন বেশি বা বাইরে সময় কাটান? তাহলে প্রতিদিন অন্তর্বাস পাল্টান
রাতে ঘুমানোর সময় অন্তর্বাস না পরাই ভালো—এতে শুক্রাণু উৎপাদন ঠিক থাকে
পলিয়েস্টার বা সিনথেটিক জাঙ্গিয়া এড়িয়ে চলুন
বিশেষ সতর্কতা দরকার কিশোর ও তরুণদের, যাদের শরীর এখনও বিকাশের মধ্যে আছে।