স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, এর ফলে বিদ্যুতের বিল বেশি আসছে। এই আবহে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিল, সরকারি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া উপভোক্তাদের বাড়িতে আপাতত স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হল। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, কিছু অভিযোগ পেয়ে প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে রাজ্যের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: “ব্যবসায়ীদের নিয়ে চলতে চেষ্টা করি তাই এই জয় আমাদের”; মন্তব্য বাপী সাহার
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারের মতো জায়গায় ‘সফল ভাবে’ স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। তার পরে তিন-চারটি জেলায় কিছু সংখ্যক উপভোক্তার বাড়িতেও পরীক্ষামূলক ভাবে স্মার্ট মিটার বসানো হয়। কিন্তু তা নিয়ে কিছু অভিযোগ পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য আপাতত উপভোক্তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এই স্মার্ট মিটার বসানোর পরে বিদ্যুতের বিল বেশি আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বহু গ্রাহক। কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি হুগলির ব্যান্ডেলের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর পরে এক মাসে ১২ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল এসেছে। এই নিয়ে একযোগে প্রতিবাদে সরব হয় বিরোধী বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, জোর করে প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর অধীনস্থ সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ মেনস ইউনিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ রজ্য বিদ্যুৎ শিল্প সহায়ক ইউনিয়ন ও পেনশনার্স সমন্বয় সমিতির অভিযোগ, জোর করে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর কৌশলে রাজ্যের মানুষকে প্রিপেড স্মার্ট ইলেট্রিক মিটার ব্যবহারে বাধ্য করছে।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলেও শাস্তি! ভিডিয়ো বানালে বা মোবাইলে রাখলে হবে আরও ভয়ঙ্কর হাল
সিপিএমের সংগঠনের আরও অভিযোগ ছিল, কোনও ক্ষেত্রে যদি মিটারে ত্রুটি পাওয়া যায়, তা হলেও অতিরিক্ত খরচ হবে গ্রাহকদেরই। এই বিষয়টি পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে কোনও সমস্যা হলে তার সুরাহা পেতে বেগ পেতে হবে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। আগাম টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ নেওয়ার ফলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহকেরা। এমনকি, মাঝ রাতে যদি প্রিপেডের টাকা শেষ হয়ে যায়, তাহলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বিদ্যুতের দামও চাহিদা অনুযায়ী ওঠানামা করবে, যা সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি করবে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকেরা। ফলে কৃষিজ পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে দাবি বাম সংগঠনগুলির। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এ বার এই স্মার্ট মিটার বসানোর বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল রাজ্য। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পরে শুভেন্দু একটি পোস্ট দিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বিজ্ঞপ্তির শেষ পঙক্তি লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে লেখেন, ‘‘বোঝো ঠ্যালা।’’ ওই শেষ পঙক্তিতে গ্রাহকদের বাড়িতে আপাতত স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে রাজ্যের তরফে।