নেপালে জেন জি-র গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ ও দেশত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই যে প্রশ্নটি মাথাচাড়া দিয়েছে, এখন দেশের কর্তৃত্ব কার হাতে যাবে! বাংলাদেশের মতো কোনও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন, নাকি সংসদ ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতির তদারিকে ভোটে যাবে নেপাল! বিশেষত গণঅভ্যুত্থানের দুদিনের মাথায় সরকারের রথের চাকা ঘোরানোর মতো কোনও মহারথীকে সামনে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী আপাতত ইস্তফা দিলেও গাঢাকা দিয়ে রয়েছেন। বিরোধী দলের তরফে গণইস্তফা দেওয়ায় সংসদের টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবারই দুপুরে অভ্যুত্থানকারীরা রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির সভাপতি রবি লামিছানেকে নখখু জেল ভেঙে মুক্ত করার চেষ্টা করে। উন্মত্ত জনতাকে দেখে জেল কর্তৃপক্ষই তাঁকে ছেড়ে দেয়। তাঁকে তাঁর স্ত্রী নিকিতা পৌডেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি পরিস্থিতিতে তাঁকে জেলে রাখা উচিত মনে হচ্ছে না। তাই মুক্তি দেওয়া হয়েছে রবিকে। উল্লেখ্য সমবায় দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ “প্রতিবেশী ভাল থাকলেই আমরা ভাল থাকব, নয়াদিল্লি-নেপাল সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য নয়, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে, কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ বা বলেন শাহ সামনের সারিতে এসে গিয়েছেন। ফেসবুকে বলেন শাহ আজ বিক্ষোভকারীদের শান্ত ও সংযত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করায় তিনি জেন জি প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতিত্ব তুলে দেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই যে, এটা জেন জি আন্দোলনের ফল। নবীন প্রজন্মকে তিনি বলেন, শোষকের ইস্তফার লক্ষ্য পূরণ হয়ে গিয়েছে। এখন সময় এসেছে সংযম প্রদর্শনের।
তিনি সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশ ও জাতির সম্পদ নষ্ট করার অর্থ আপনারা আপনাদেরই সম্পদ ধ্বংস করছেন। ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের ক্ষতি হলে তা দেশেরই ক্ষতি। এখন আপনাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। এখন আপনাদের প্রজন্মকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, আলোচনা যখনই হবে, তার আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি। দেশের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিও দেশে শান্তি ফেরাতে সকলকে একজোট হয়ে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। কেননা, এদিনও গন্ডগোলে আরও দুজনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২২।
আরও পড়ুনঃ মিরিক-পানিট্যাঙ্কিতে পাঠানো হল বিশাল ফোর্স, আগুন জ্বলছে ওপারে
এই অবস্থায় হিমালয়চুম্বী সমস্যায় পড়ে গিয়েছে নেপাল। বিরোধী দুই দল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি ও রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির সমস্ত এমপি পদত্যাগ করেছেন। আরএসপি-র কার্যকরী সভাপতি ডোলপ্রসাদ আর্যল জানান, তাঁদের ২০ জন এমপি ইস্তফা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আরআরপির মুখ্য সচেতক জ্ঞানবাহাদুর শাহি জানান, তাঁদের ৪২ জন এমপি ও বিধায়ক গণইস্তফা দিয়েছেন।
এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর জল্পনা শুরু হয়েছে বলেন শাহ নাকি রবি লামিছানে? কে হতে পারেন নেপালের শাসনদণ্ডের পরবর্তী মুখ। তাঁদের নাম মুখে মুখে উঠে আসার প্রধান কারণ, দুজনেই তরুণ তুর্কি নেতাদের প্রধান মুখ। দেশে রাজনৈতিক জমিতে লামিছানে অ-বিতর্কিত মুখ। এবং সদ্য যে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার নেপথ্য কারিগরও অনেকে তাঁকেই মনে করেন।
বেশিরভাগ নেপালবাসীই তাঁকে স্বচ্ছ বলে মনে করেন। এবং নেপালের বয়োবৃদ্ধ ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিকল্প বলে বিশ্বাস করেন। তাঁর নামের প্রভাব এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘুরছে। তাঁর মূল আবেদনই ছিল নেপালের ছাত্র-যুব, বেকার ও মধ্যবিত্ত শহুরে ছেলেমেয়েদের প্রতি। তিনি চিরাচরিত নেতাদের মতো জনগণের বাইরে আত্মসাতের রাজনীতি করতেন না। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অসাধারণ দক্ষতার কারণে যুবসমাজের প্রিয় মুখ রবি। অনলাইন ডাককে তিনি ডিজিটাল হতাশায় রূপান্তরিত করে আন্দোলনে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।