ছোট গল্প
“ডিভোর্স ” (পার্ট-1)
— সৌমেন মুখোপাধ্যায়
(পাত্রী দেখা)
সময়ের সাথে চলতে গিয়ে একদিন সেই অপেক্ষা করা দিনটি চলে আসে। ঘটক নবীন চাটুজ্জ্যের কথামত চৌধুরী বাড়ীর সবাই রাধামোহনপুর থেকে একটা গাড়ী করে পাত্রী দেখার জন্য রওনা হয়। অক্ষয়ের মনে একটা ভয়ের শঙ্কা দেখা দিতে থাকে,’ না জানি কেমন মেয়ে হবে।’ আজ অক্ষয়ের সাথে যাচ্ছেন তার বিধবা মা সত্যবতী দেবী, বড়দা অঞ্জন, মেজদা রঞ্জন, বড়বৌদি, মেজবৌদি, বড় ভাইপো, বড় ভাইঝি আর মেজ ভাইপো। পাড়ার একটা গাড়ী করে শুভ কাজে শুভদিন থেকে বার হয়। রাস্তায় ঘটক নবীনকে গাড়ীতে কোনরকমে স্থান দিয়ে গন্তব্যস্থলের দিকে গাড়ী এগিয়ে চলে। গন্তব্যস্থলে এসে গাড়ী থামে। গাড়ী থেকে নামতেই সেই ছোট্ট গ্রামের লোকজনের ভিড় জমে যায়। সেই বাড়ীর লোকজনের আপ্পায়নে মাত্রায় প্রথমে একটা মাটির ঘরে পাত্রপক্ষ গিয়ে প্রবেশ করে। ঘরের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারা যায় মহিলাদের হাতের ছোঁয়াতে ভাঙা মাটির ঘর কোনরকমে টিকে আছে। গরীব বলতে একদম এইরকম গরীব অক্ষয় স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।
অতিথি আপ্পায়নের প্রথম পর্বে জলখাবার, মিষ্টি । তারপর চলে নানান কথাবার্তা। শেষ পর্যন্ত যার অপেক্ষায় সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে সে সবার সামনে একটা চেয়ারে এসে বসে, তারসাথে কয়েকজন মহিলাও এসে সমস্ত ছোট্ট ঘরটি ভরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: Siliguri: মেয়েরা আজ খেলার মাঠে
“তোমার নাম কি মা?” সত্যবতী দেবী জিজ্ঞেস করেন।
“তৃতীয়া”, সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় তৃতীয়া।
অক্ষয়ের মনে তখন একটা প্রশ্ন জাগে, ঘটক যে ফোটো দেখিয়েছে তাতে মেয়েটি এতো মোটা ছিল না, আবার মেয়েটি সাজ পোশাক দেখে মনে হয় বিউটি পার্লার থেকে সেজে এসেছে, গরীব ঘরের মেয়ে আবার এইরকম হয় …।
“কত দূর পড়াশোনা করেছো ?”
“কলেজ পর্যন্ত ,” পাশের দেখে একজন বিবাহিতা মহিলা বলে উঠেন।
“বাড়ীর সব কাজ জানো তো , যেমন রান্নাবান্না ? আমাদের মত্তবিত্ত পরিবারে ঘরোয়া কাজ ছাড়া আর কিছু নেই। ” সত্যবতী দেবী বলেন।
“হাঁ হাঁ, সব জানে, সে দিকে আপনার কোন চিন্তা নেই। আমার মেয়ে এইসব কাজে খুব পটু।” তৃতীয়ার মা বলেন।
“জানেন, আমার মেয়ে চা থেকে শুরু করে সব কাজই করে, সেইদিকে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। আর যদি অসুবিধা হয় নিজের মেয়ের মতো করে শিখিয়ে দিবেন। ” মানসী দেবী নিজস্ব আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা গুলো বলে যান।
সত্যবতী দেবী বলেন, “বাড়ীতে থাকি আমি আর আমার ছোট ছেলে আর ওরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকে। সংসারটা আমাকেই সামলাতে হয়। এবার থেকে ছোট বৌমার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত হতে পারবো।”
“হাঁ হাঁ, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আমার মেয়ে সব কাজে পটু। আমি ওকে এইসব কাজে শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছি। ” মানসী দেবী বলেন।
“আমাদের মেয়েকে কেমন দেখতে লাগলো সেটা বলুন?” মানসী দেবী বলেন।
“ভালো”, এই বলে পাত্রপক্ষ চুপ করে যায়।
“এবার তাহলে কবে আমরা আপনাদের বাড়ী যাবো সেটা বলে দিবেন ।” মানসীদেবী বলেন।
“হাঁ ঠিক আছে বলে দেব।”
পাত্র – পাত্রীর মধ্যে আলাদাভাবে কিছু কথা বলার জন্য বললে পাত্র তাতে রাজী হয়। পাশের বাড়ীতে গিয়ে আলাদা কথা বলার জন্য উঠে যায়। পাশের বাড়ীতে গিয়ে ভবিষ্যতের জীবন সঙ্গীর সাথে কথা বলবে কি সবাই এসে আবার সেইখানে ভিড় করে দেয়।
আরও পড়ুন: Purulia: পুরুলিয়া মানবাজারের মাকড়কেন্দিতে মহিলা ছৌ সংস্কৃতি মেলার সূচনা
একটা চেয়ারে বসে পাত্র আর পাত্রের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে আছে পাত্রী আর দুজনকে ঘিরে ঘর আর পাড়ার সব মহিলা আর দু’চারজন পুরুষ।
পাত্র জিজ্ঞেস করে, “আপনার নাম ?”
পাত্রীর দিদি উত্তর দেয়, “তৃতীয়া” ।
অক্ষয় অবাক হয়ে যায়। কাকে জিজ্ঞেস করলাম আর কে উত্তর দিচ্ছে।
“কলেজে কতদূর পড়াশোনা করেছো ?” অক্ষয়ের প্রশ্নে তৃতীয়ার এক কাকাতো ভাই উত্তর দেয়, “পার্ট 1, ফাস্ট ডিভিশন। ”
“তারপর …”
“তারপর এখন বিয়ের সম্বন্ধ চলছে। ” কাকাতো উত্তর দেয়।
“আর পড়তে ইচ্ছা করে না ?” অক্ষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয় পরমা, “বুঝতেই তো পারছেন। আমাদের গরীব ঘরের মেয়েদের অবস্থা।”
অক্ষয় মনে মনে ভাবলো, ঠিকই তো বলেছে।
“কেমন লাগলো? পছন্দ হয়েছে ?”পরমা বলেন।
অক্ষয় মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয়।
বাড়ী ফেরার সময় সবাই মিলে আলোচনা হয়, গরীব ঘরের মেয়ে ভালো হবে। এই বিয়েতে অমত না করাই ভালো।