Tuesday, 17 June, 2025
17 June, 2025
Homeগল্পBengali Short Story: "নীরব পৃথিবী চায়"

Bengali Short Story: “নীরব পৃথিবী চায়”

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

নীরব পৃথিবী চায়” (পার্ট: ৪)

  সৌমেন মুখোপাধ্যায়

ব্যাপকটা নরেনের মাথায় সম্পূর্ণ ঢুকে যায়। সেই দোকানের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে – সেই ভদ্রলোকের সাথে ভদ্রমহিলার তর্কবিতর্ক চলছে। নরেনের ভয় হতে থাকে পাছে তাকে ধরে যে ভদ্রলোকটি সিগারেট খায় এই কথাটি বলার অজুহাতে। তাই তাড়াতাড়ি নরেন সেইখান থেকে  সরে একটা দোকানে ঢুকে পড়ে যাতে তারা কেউ দেখতে না পায়।

“বাবু কি নেবেন?” নরেনকে দেখে দোকানদার জিজ্ঞেস করে।

“কই, কিছু না।” দোকানদারের দিকে তাকিয়ে দেখে দোকানদার  তার দিকে কটমট কটমট করে তাকিয়ে আছে। তার দেহের অর্ধেক অংশ দোকানদারটি গ্রাস করতে চলেছে।

“আসলে বাস আসতে এখনও অনেক দেরী, তাই বিশ্রাম করবার জন্য একটু বসলাম। কিছু মনে করবেন না।”

“না না, তা আর এমন কি আছে,   বিশ্রাম করুন না, যতখুশি বিশ্রাম করুন।  কি জানেন, দোকানটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে না তাই বলছিলাম যদি বাইরের বেঞ্চিতে বসেন তাহলে ভালো হয়। যা চাইবেন তাই পাঠিয়ে দেব।”

“না না, ঠিক আছে।” এই বলে দোকানদারের অগ্নিপ্রজ্বলিত চোখের দিকে তাকিয়ে নরেন দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। সোজা আবার সেই বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়। ‘না ওরা কেউ নেই’  মনে মনে ভাবতে থাকে নরেন। চারদিকে তাকিয়ে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অস্থির মন নিয়ে বেঞ্চে এসে বসে নরেন।  অস্পষ্ট   গোধূলী আলোয় হাতঘড়ি ছ’টা বাজার নির্দেশ দেয়। নরেন চমকে উঠে, তাহলে পৌনে – ছ’টার বাসটা কি চলে গেছে? তাহলে তাকে এখানে ঠান্ডায় সারারাত কাটাতে হবে। হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস তার শরীরের প্রতিটি লোমে শিহরণ জাগাতে থাকে। চিন্তার আগুন দাবানলের মতো তাকে পোড়াতে থাকে। কি করবে ভেবে না পেয়ে ছটফট করতে থাকে।

আরও পড়ুন: Bankura: ‘দোষারাপের’ খেলায় নেতারা; বাধ্য হয়ে নিজেদের টাকায় রাস্তা

বহুদূর থেকে একটা ছোট আশার আলো তার চোখে এসে পড়ে। ক্রমশঃ তা বড় হয়ে সুস্পষ্ট হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। একটা ট্যাক্সি। নরেন পিছন ফিরে দাঁড়াবে বলে মনস্থির করে কিন্তু তার অবসর পায় না, একটা মেয়েলি কন্ঠে চেনাসুরে তার নাম ধরে ডাকা শুনতে পেয়ে সে চমকে যায়।

“এই এই এইখানে। এই নরেন, ভিতরে এসো, ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?”

কথাটা শুনে নরেন থমকে দাঁড়ায়। তারপর কি ভেবে ট্যাক্সির ভিতরে উঠে বসে। ট্যাক্সির ভিতর বসে থাকা ভদ্রমহিলাটি নরেনের একটা হাত ধরে টেনে তার কাছে পিছনের সিটে বসালেন। অপরিচিতা ভদ্রমহিলা তার সাথে এমন আচরণ করবে বলে সে প্রস্তুত ছিল না। নইলে ট্যাক্সিতে না উঠে বাকী রাস্তা সে হাঁটতে পারতো।

“এখানে কি কাজে এসেছিলে?” ভদ্রমহিলাটি জিজ্ঞেস করেন।

“একটা চাকরীর ইনটারভিউ ছিল।”

“চাকরী!” কথাটা যেন ভদ্রমহিলাটিকে অবাক করে দেয়। তারপর একটু মুচকি হেসে বলেন, “তারপর কোথায় যাবে ?”

” বাড়ী। নিকুঞ্জপুরে।”

“ভালোই হলো , আমি তো ঐদিকেই যাচ্ছি। তোমাকে বাড়ীতে নামিয়ে দেবো। তারপর…..”

“কিন্তু, আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। ” আমতা আমতা করে নরেন প্রশ্ন করে।

“আপনি” কথাটা শুনে ভদ্রমহিলাটি না হেসে থাকতে পারলেন না। ভদ্রমহিলার হাসি দেখে নরেন একটু রেগে বলে, “আপনি হাসছেন ? আমি যদি কোন ……”

নরেনের কথাটা থামিয়ে দিয়ে ভদ্রমহিলাটি বলেন, “না না, দোষটা তোমার নই আমারই।  আসলে আমি এখনও আমার পরিচয় দিইনি। তোমার মনে পড়ে নরেন, কলেজের ম্যাগাজিনে তুমি যে কবিতাটি দিয়েছিলে “সঞ্চিতা “, আমিই সেই সঞ্চিতা। ”

“আপনি …..মানে……তুমিই সেই  সঞ্চিতা।” কথাটা শেষ করে নরেন হাসে। সঞ্চিতা এবার সেই “সঞ্চিতা” কবিতাটি মুখস্থ বলতে থাকেন।

“তুমি চঞ্চল ঝরণা হয়ে

মনেরি আবেগ নিয়ে …….”

নরেন তন্ময় হয়ে সেই কবিতাটি শোনে। কল্পনাও করতে পারে না যে তার লেখা কবিতাটি অন্য কারুর পছন্দ হয়ে যাবে। কবিতাটি যেটার যেকারণে লেখা হয়েছে তার যথার্থ মানে অন্যরকম, কিন্তু এই ভদ্রমহিলার নাম একই থাকায় নামকরণ একই হয়ে গেছে। সঞ্চিতা ছিলেন তার ক্লাসমেট। প্রথম দেখায় তার ভালো লেগেছিল এই ক্লাসমেটকে। আজ সেই পুরাতন স্মৃতি নরেনের হৃদয়কে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

“এই নরেন, তুমি কি অবাক হয়ে গেলে নাকি ?”

“অ্যা…. ও…. না না, আসলে আমি অন্য কথা ভাবছিলাম। ”

“কি কথা ?”

সব বিষয়ে জানান আধিকার সঞ্চিতার আগের মতই আছে দেখে নরেন বলে, “আসলে কি ব্যাপার জানো সঞ্চিতা,” বলে নরেন থেমে যায়।

“কি ?” সঞ্চিতা জিজ্ঞেস করেন।

“আমি এখন, না থাক,  তোমার কথায় বলো।”

“আমার কথা পরে হবে, তোমার কথা বলো। অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা।”

“কি করেই বা বলবো আর কোন মুখেই বা বলবো, আর বলতেও লজ্জা লাগে যে আমি এখনও একজন বেকার যুবক। ”

“তাতে কি হয়েছে, এই কথাটা সত্যি যে তুমি আজ বেকার, কিন্তু নরেন, তুমি ভেবে দেখ, এই দুনিয়ায় কত বেকার যুবক পথে – ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু তারা কেউ ভেঙে পড়েনি। তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যে কোন একটা কাজের জন্য।  তুমিও চেষ্টা করো দেখবে তুমিও  নিশ্চয় একটা ভালো কাজ পেয়ে যাবে। ”

“হঁ জানি, কিন্তু সেটা কি আমার দ্বারাই সম্ভব হবে ?”

“কেন হবে না। মানুষই অসম্ভবকে সম্ভব করছে, গ্রহ- গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে। আর তুমি একটা কাজের জন্য….. ছিঃ ছিঃ নরেন, এমনভাবে ভেঙে পড়লে কি হয়, চেষ্টা করে যাও সফলতা অবশ্যই পাবে।”

“তাহলে…..”

“হাঁ, চেষ্টা করে যাও। তুমি মনে করো পুরানো দিনের কথাগুলো, ইস্কুল- কলেজের কথা, তোমার মতো কৃতি ছাত্র তখন কেউ ছিল না, তোমার নাম সবাই করতো, সবাই তোমার পাশে ছিল আর আজও আছে।”

আরও পড়ুন: Hoogly Tarakeswar: ফুলকপি-টমেটোতেই পেট ভরছে পড়ুয়াদের, ‘সবুজ দ্বীপে’র মধ্যে আস্ত স্কুল

“তাহলে চেষ্টা করে যাবো সঞ্চিতা।”

“নিশ্চয়, সেই কথাটাই আমি বলছি।” তারপর একটু থেমে বলেন,  “মা, বোন ওরা কেমন আছেন?”

“ভালো নেই,  ওদের নিয়েই আমার ভারী চিন্তা। মা অসুস্থ  আর বোন …….” কথাটা শেষ না করে দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে নরেন।

নরেনের হাত দুটো ছাড়িয়ে নিজের কোলের মধ্যে রেখে সঞ্চিতা বলেন, “ছিঃ, কাঁদতে নেই।  তুমি কাঁদলে বাড়ীর লোকজনও কাঁদবে। আচ্ছা, তুমি আমার দিকে তাকাও। ”

গাড়ীর ভিতর অস্পষ্ট আলোয় সঞ্চিতার মুখ ভালো করে দেখা না গেলেও বেশ অনুমান করা যায় তার চোখগুলোও ছলছল করছে।

“নরেন। ”

“কি।”

“তুমি….. তুমি অনেক বদলে গেছো।”

“সমাজ আর সময় আমাকে বদলে দিয়েছে। আর তুমিও বদলে গেছো সঞ্চিতা।”

তার মুখ থেকে কি উত্তর বার হলো নরেন তা শুনতে পায় না। এমনসময় ড্রাইভার বলেন,  “বাবু নিকুঞ্জপুর চলে এসেছি, ভাড়াটা মিটিয়ে দিন।”

ভাড়ার কথা শুনে সঞ্চিতা বলে উঠেন, “না না,  ওর ভাড়া আমি দিয়ে দেবো।”

“না না,আমি দিয়ে দিচ্ছি সঞ্চিতা।”

জোর করে বাধা দেন সঞ্চিতা। তাকে নামিয়ে দিয়ে ট্যাক্সিটা তার গতি নিয়ে নরেনের চোখের সামনে দিয়ে এগিয়ে যায়। যাবার বেলায় একটা কথা তার কানে শুধু বাজতে থাকে, “আসছি, আবার দেখা হবে।” কিন্তু কবে যে দেখা হবে তা বলা খুবই কষ্টকর।  চিন্তা করতে করতে নরেন বাড়ীর দিকে পা চালিয়ে দেয়।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন