সৌমেন মুখোপাধ্যায়
খবরের কাগজের হেড লাইন পড়ে চমকে যান অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অনন্তকুমার চট্টরাজ। সৎ শিক্ষক বলে খ্যাতি অর্জন করেছেন। কিন্ত, খবরের কাগজের কয়েকটা অক্ষর তাকে পাগল করে দেয়। পনের বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা মেয়ে সন্তান প্রসবকালীন মৃত্যু।
পলাশনগর গ্রামে দিগধ্বজ বাউরীর বাড়ীতে এক হৈ চৈ পড়ে যায়। পাড়া প্রতিবেশীর লোকেরা তার বাড়ীতে এসে ভিড় জমিয়েছে। শিক্ষক অনন্তকুমার বাবু দিগধ্বজের মাটির বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখেন তুলসীতলায় একটা খাটের উপর সাদা কাপড়ে মোড়া ফুলের মালা দিয়ে সাজান দিগধ্বজের একমাত্র ফুটফুটে মেয়েটির মৃতদেহ। দিগধ্বজের কাছে গিয়ে শিক্ষকমশায় বলেন, ” কি করে মারা গেলো পুটি?”
আরও পড়ুন: বঙ্গবার্তার খবরের জের, গ্রেফতার চা বাগানের সর্দার
কাঁদতে কাঁদতে দিগধ্বজ বলে, “মাস্টারমশায়, কাল রাতে বাচ্চা হবার সময়। ”
অনন্ত বাবু বলেন, “এতো কম বয়সে বিয়ে কেন দিলি? পড়াশোনা করাতে পারতিস। সরকার কত মেয়েদের সুযোগ দিচ্ছে ?”
দিগধ্বজ বলে, “মাস্টারমশায়, ভালো ছেলে পেলাম তাইতো…..” অসমাপ্ত কথাটা ইশারায় শেষ করে।
অনন্ত বাবু বলেন, ” জানিস, অপরিণত বয়সে বিয়ে দেওয়ার ফলে কত মেয়ে সন্তান প্রসবের সময় মারা যাচ্ছে। ”
দিগধ্বজবলে, “কি করব মাস্টারমশায়, যা হবার তা তো হবেই। ” এই বলে দিগধ্বজ জ্বালানির জন্য কাঠ জোগাড় করার জন্য অন্যত্র চলে যায়।
আরও পড়ুন: গৌরবময় ২৫০! ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের নিদর্শনই নয়, ইতিহাসের সাক্ষী
অনন্ত বাবু একবার খাটের দিকে তাকান। এখনও পুটির সুন্দর মুখটা দেখা যাচ্ছে। পনের বছরের মেয়ে – এখন ইস্কুল যাবার বয়স। পড়াশোনার জন্য থেকে কত সুবিধা পেত, তা না হয়ে আজ সে ….. আর অন্য দিকে মেয়ের বাবা হয়ে ভালো পাত্র পাওয়ার লোভে নিজের কম বয়সী মেয়ের বিয়ে দিয়ে মেয়ের বলি দিল। সাতপাঁচ চিন্তা মাথায় নিয়ে ধীরে ধীরে শিক্ষকমশায় সেইখান থেকে চলে যান, সঙ্গে করে নিয়ে আসেন বিগত অভিজ্ঞতার জ্ঞান আর উপদেশ।