কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুরিঃ
নিছকই খেলায় মেতে ছিল ১৪ বছরের কিশোর। তার মাঝেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। মাঠে পড়ে থাকা বাঁশ পেটে ঢুকে গিয়ে ফুঁড়ে দেয় লিভার, কিডনি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইনফেরিওর ভেনাক্যাভা, যা কিনা শরীরের অন্যতম প্রধান শিরা। মৃত্যুর মুখ থেকে ওই কিশোরকে বাঁচাতে নজির গড়লেন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ময়নাগুড়ির পেটকাটি এলাকার বাসিন্দা অমিত সাহা বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল। খেলার উইকেট হিসেবে ব্যবহৃত একটি ধারাল বাঁশ হঠাৎ পেটে ঢুকে যায় অমিতের। সঙ্গে সঙ্গেই রক্তপাত শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা কোনওরকমে তাকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ।
আরও পড়ুনঃ এটিএম লুটে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতী; প্রশ্নের মুখে পুলিশ
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় অমিতের রক্তচাপ ছিল অস্বাভাবিক কম, হিমোগ্লোবিন মাত্র ৬.৬-এ নেমে আসে। একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। রোগীকে অন্যত্র রেফার করার সময় ছিল না। অবস্থা বেগতিক বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের চিকিৎসক দল।
অপারেশন টেবিলে নামেন সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ আশিসকুমার সাহা। তাঁর নেতৃত্বে তৈরি হয় ১০ জন চিকিৎসক, নার্স এবং টেকনিশিয়ানের একটি বিশেষজ্ঞ দল। রাত ৯টা নাগাদ শুরু হয় অস্ত্রোপচার, যা চলে টানা দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। অবশেষে শরীরের গভীরে প্রবেশ করা প্রায় সাড়ে তিন ফুট বাঁশ বার করতে সফল হন চিকিৎসকরা।
ডাঃ সাহা জানিয়েছেন, “কিশোরটির ব্লাড গ্রুপ ছিল নেগেটিভ। এই গ্রুপের রক্ত পাওয়া সহজ নয়। এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ নিজে উদ্যোগ নিয়ে রক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। এক ইউনিট রক্ত হাতে পেয়েই আমরা অস্ত্রোপচার শুরু করি। বাঁশটি চার ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত শরীরে ঢুকে গিয়েছিল। আরও খানিকটা দেরি হলে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা ছিল প্রবল।”
আরও পড়ুনঃ ১ লক্ষ টাকা তোলার টাকা না দেওয়ায় তৃণমূল কর্মীর হুমকি; হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
এই জটিল অপারেশন শেষে বর্তমানে অমিত সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের সিসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত সে স্থিতিশীল, তবে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনার পর এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ বলেন, “আমাদের হাসপাতালের টিম যে দক্ষতার সঙ্গে এই অপারেশন সম্পন্ন করেছে, তাতে আমরা সত্যিই গর্বিত। প্রত্যেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ওই ছেলেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। ঝুঁকি ছিল, কিন্তু প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে, সেটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।”