কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
আরজি কর কাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হয়েছে কয়েকদিন আগেই। মশাল মিছিল, রাত দখল, প্রতিবাদ – কত কী হল। কিন্তু ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধে কতটুকু লাগাম পড়েছে? কতটাই বা বদলেছে মানসিকতা? শিলিগুড়িতে যা সব হচ্ছে, তাতে হলফ করে বলা যায়, মানসিকতায় বদল আসেনি। দেড় বছরের শিশুকন্যাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ সামনে আসার পর তেমনটাই মনে হচ্ছে। কী শুনে আঁতকে উঠলেন? শনিবার বিকেলে আঁতকে ওঠার মতোই ঘটনা ঘটেছে প্রধাননগর থানা এলাকায়। রাতেই ২৭ বছরের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার ধৃতকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে।
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ওয়েস্ট) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলছেন, ‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা পদক্ষেপ করেছি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুনঃ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইঁদুর জ্বর; ধূপগুড়িতে মৃত্যু কিশোরের
প্রধাননগর থানা এলাকায় দেড় বছরের শিশুকন্যার ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী তরুণের বিরুদ্ধে। কোলে নিয়ে ঘোরানোর নামে ঘরে নিয়ে শিশুটিকে অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ। শিশুর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে কয়েকদিন আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। বর্তমানে তরুণ নিজের ৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। সন্তানসম শিশুকন্যার ওপর তিনি কীভাবে এমন অত্যাচার চালাতে পারলেন, সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে পাড়ায়।
বিষয়টি ‘সেক্সুয়াল পারভারশান’ বলে মনে করছেন সূর্য সেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুতপা সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন হলেও ভয়ানক। আমার মনে হয়, এমন মানুষজনের চিকিৎসা হওয়াটা ভীষণভাবে প্রয়োজন।’ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোবিদ চিকিৎসক উত্তম মজুমদারের মতে, ‘পর্নসাইটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এই ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়ে থাকতে পারে। যৌন উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এই রকমের ঘটনা শুনতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনঃ মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ! কাঠগড়ায় চিকিৎসক দম্পতি
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুকন্যাকে প্রায়ই কোলে নিয়ে ঘুরতেন অভিযুক্ত। শনিবার বিকেলেও তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে ঘুরছিলেন। সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের লোকেরা খেতে বসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান অভিভাবকরা। শিশুকন্যাকে বাড়িতে দিয়ে যান ওই তরুণ। তখন সন্তানের গোপনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন দেখতে পান পরিবারের লোকেরা। দ্রুত তাঁরা প্রধাননগর থানার দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে সেদিন রাতেই বাড়ি থেকে অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শিশুটির এক অভিভাবকের কথায়, ‘ও এমন করবে ভাবতে পারিনি। ওদের মতো মানুষের জন্য অভিভাবকরা আর কারও কোলে সন্তানকে দিতে সাহস পাবেন না।’