কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
প্রায় নয় বছর অপেক্ষার পর অবশেষে রবিবার হয় এসএসসি-র লিখিত পরীক্ষা । নির্ধারিত সময়ে শুরুর পর তা একেবারে নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল। এদিন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছিল।
রবিবার দুপুর ১২টায় রাজ্যের মোট ৬৩৬টি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয়ে দেড়টায় শেষ হয়। তবে বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীরা আধঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পান, তাঁদের পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর ২টোয়। এদিন কোনও রকম অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার খবর মেলেনি।
আরও পড়ুনঃ হঠাৎই শুরু হইহই! চোখ উঠল কপালে; গোঘাটের ভেলাদিঘিতে সকাল ৬টায় এও সম্ভব?
পরীক্ষা শেষে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র সহজ ও মানানসই ছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই মত, এত দিনের অপেক্ষার পর নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও কেউ কেউ এখনও দুর্নীতি নিয়ে সন্দেহ করছেন। এরপর ইন্টারভিউতে কিছু কারচুপি হবে কিনা, সেই প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশেই নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এসএসসি। একাধিক বিতর্ক ও বাধা পেরিয়ে শেষমেশ নির্দিষ্ট দিনেই পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হয়।
এসএসসি সূত্রে খবর, এদিন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার পরীক্ষার্থী রাজ্যের বাইরের—উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে এসেছেন। অর্থাৎ মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ১০ শতাংশই বাংলার বাইরে থেকে আসা।
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যেই জারি করেছে কমিশন। নবম-দশমে ২৩ হাজার ২১২টি এবং একাদশ-দ্বাদশে ১২ হাজার ৫১৪টি শূন্যপদে মিলিয়ে মোট ৩৫ হাজার ৭২৬টি পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ‘১৫২ জন দাগিকে অ্যাডমিট কার্ড! বিস্ফোরক শুভেন্দু
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম স্নাতক পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকলেই আবেদন করা যেত। তবে পরে নিয়ম বদলে অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়।
এদিকে যোগ্য চাকরিহারা প্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্য সরকার বা শিক্ষা দফতর সৎ থাকলে আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তাঁদের বক্তব্য, অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থীদের আবার নতুনদের সঙ্গে সমানভাবে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে, যা একেবারেই অন্যায় ও অসম লড়াই।
যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সুমন বিশ্বাস অভিযোগের সুরে দাবি করেছেন, এই পরীক্ষাতেও অযোগ্যরা আছে! পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগে তিনি বলেন, “এসএসসি যে তালিকা দিয়েছে সেটা লিস্ট ওয়ান। সেখানে অযোগ্যরাও আছে। তাই এই পরীক্ষা নিয়েও মামলা হবে। আমরা এক রাতের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি, কারণ জানি এরও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
সুমনের অভিযোগ, “এসএসসি নিজেদের অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। তারা বলছে লিস্ট ওয়ান প্রকাশ হয়েছে, আরও লিস্ট আসবে। তাহলে এই তাড়াহুড়োর কারণ কী? আমরা আশা করি, এবার আর আগের মতো ভুল হবে না।” পাশাপাশি স্পষ্ট জানান – পরীক্ষা যেমন চলছে চলুক, কিন্তু নির্ভুল যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।