সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
পলিক্লিনিক লাইসেন্সের বালাই নেই। অথচ ওষুধের দোকানে বসে বহালতবিয়তেই বছরের পর বছর ধরে রোগী দেখে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। নথিভুক্ত না থাকার কারণে কোথায় কোন চিকিৎসক পরিষেবা দিচ্ছেন তার কোনও তালিকাও নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। এর আগে কোচবিহারে একাধিকবার ভুয়ো চিকিৎসক ধরা পড়েছে। এখনও কোথাও ভুয়ো চিকিৎসক রয়েছে কি না তাও অজানা। বিষয়গুলি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পলিক্লিনিকগুলিকে দ্রুত লাইসেন্স তৈরি করে নেওয়ার জন্য কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। তারপরেও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। লাইসেন্স তৈরি হয়ে গেলে পলিক্লিনিকগুলিকে চিকিৎসক পিছু মোটা টাকা কর দিতে হবে সরকারি কোষাগারে। সেজন্যই লাইসেন্স তৈরির প্রবণতা নেই।
আরও পড়ুনঃ বিপাকে স্বাস্থ্য দফতর! বিধবা ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রিকুমার আড়ির বক্তব্য, ‘বারবার করে বলা হচ্ছে পলিক্লিনিক সার্টিফিকেট তৈরি করে নিতে, কিন্তু কেউ এগোচ্ছে না। হাতেগোনা দুই-চারজন বাদ দিয়ে কারও সেই সার্টিফিকেট নেই।’ সরকারি হিসেব তো নেই-ই, জেলায় মোট কতগুলি পলিক্লিনিকে কতজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন তার কোনও বেসরকারি হিসেবও নেই। অধিকাংশ ওষুধের দোকানেই বড় বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের নাম লিখে রাখা হচ্ছে। কোথাও দুজন আবার কোথাও ২০ জন চিকিৎসক বসছেন। ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এমনকি তারও বেশি ‘ভিজিট’ নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অসমের বহু রোগী কোচবিহারে চিকিৎসা করাতে আসেন। অনেক সময়ই দালালের খপ্পরে পড়ে ভুয়ো চিকিৎসকের কাছে যান তাঁরা। হাজার হাজার টাকা খোয়াতে হয়। এর আগে এরকম অভিযোগে একাধিক ভুয়ো চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। চিকিৎসকদের পরিষেবা যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে হয় সেজন্য পলিক্লিনিক লাইসেন্স তৈরির দাবি উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
কোচবিহারের বাসিন্দা আইনজীবী শিবেন্দ্রনাথ রায় বলেছেন, ‘কোথায় কোন চিকিৎসক পরিষেবা দিচ্ছেন তার সব তথ্য যদি স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে থাকে তাহলে ভুয়ো চিকিৎসক বসার সুযোগ থাকবে না। সাধারণ মানুষকেও আর প্রতারিত হতে হবে না। যদি পলিক্লিনিকগুলি লাইসেন্স না করে তাহলে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত।’ লাইসেন্স না করার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিয়ম অনুযায়ী পলিক্লিনিকগুলিতে পরিষেবা দেওয়া চিকিৎসকদের সংখ্যাপিছু সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুনঃ চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি! অবলুপ্ত হবে সেক্টর ফাইভের চাকরি ২০৩০ সালের মধ্যে
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, একজন চিকিৎসক পরিষেবা দিলে কোনও অর্থ প্রয়োজন হয় না। একাধিক চিকিৎসকের ক্ষেত্রে ৩-৫ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে পলিক্লিনিকগুলি চলায় সরকারি কোষাগারে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোচবিহার জেলা সম্পাদক কাজলকুমার ধর বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বৈঠক করে আমাদের পলিক্লিনিক সার্টিফিকেট বানাতে বলেছিল। আমরা সংগঠনগতভাবে সবাইকে বলে দিয়েছি সেই কাজ করার জন্য।’ শুধু কোচবিহার শহরই নয়। জেলাজুড়েই এই সমস্যা রয়েছে। তুফানগঞ্জের ফার্মাসি মালিক সঞ্জীবচন্দ্র দে বলেন, ‘এমনিতেই একেক জন চিকিৎসকের প্রতি বছরে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ। ছোট ছোট দোকানগুলির ক্ষেত্রে পলিক্লিনিক লাইসেন্স করা আরও বাড়তি চাপের। কোনও ক্ষেত্রে এমনটাও হয়, একজন চিকিৎসক এক মাসের জন্য দোকানে বসেন, তারপর উনি অন্যত্র চলে যান। সেক্ষেত্রে পলিক্লিনিকের টাকাটা পুরোটাই লোকসান।’