বাড়ির সামনে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করেছিলেন। আদালতেরও দ্বারস্থ হন। তারই জেরে তৃণমূল নেতার নিদানে একঘরে করা হয়েছে একটি পরিবারকে। বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে ওই পরিবারের সদস্যদের সামাজিক বয়কট করা হয়েছে। সাহায্যের আশায় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরছে হুগলির খানাকুলের বন্দাইপুরের ওই পরিবার। ঘটনাটি সামনে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে আরামবাগ মহকুমাজুড়ে। সরব হয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুনঃ ৫ বার ট্রায়ালের পর এক বাড়ির দুই বউকে নিয়ে পালালেন এক যুবক
জানা গিয়েছে, বন্দাইপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত মণ্ডলের সঙ্গে একটি জায়গার দখলদারিকে কেন্দ্র করে বছর তিনেক আগে গ্রামের মাতব্বরদের বিরোধ বাধে। রঞ্জিত অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ির সামনে বেআইনি নির্মাণের জেরে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে রঞ্জিত ও তাঁর পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হন। বর্তমানে ঘটনাটি বিচারাধীন রয়েছে।
আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় এই এলাকার তৃণমূল নেতা তথা খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ সভাপতি অশোক কোলে ও তাঁর দলবল রঞ্জিত ও তাঁর পরিবারকে গ্রামে সামাজিক বয়কট করতে হবে বলে নিদান দেন বলে অভিযোগ। ওই পরিবারের বক্তব্য, জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি টিউবওয়েল থেকে পানীয়জল সংগ্রহ করার উপরেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলেও গ্রামের মাতব্বরদের সঙ্গে নিয়ে নিদান জারি করেছেন ওই তৃণমূল নেতা। এর ফলে গ্রামের কেউ রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সাহস দেখান না।
আরও পড়ুনঃ ‘নেতারা টাকা নিয়েছে’, ওঠবোস করে ক্ষমা চাইলেন তৃণমূল কাউন্সিলর, ভিডিয়ো ভাইরাল
এদিকে এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের জন্য বছরের পর বছর প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে, অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে দাবি রঞ্জিতের পরিবারের। এই অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা সিদ্বেশ্বর, মা সুষমা,বউদি ও তাঁর ৭ বছরের কন্যাকে নিয়ে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন রঞ্জিত।
রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “আমাদের বাড়ির সামনে বেআইনি নির্মাণের প্রতিবাদ করেছিলাম। আদালতের দ্বারস্থ হই। আমরা কেন আদালতে গিয়েছি, সেজন্য সামাজিক বয়কট করা হয়েছে। আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে রাতে বাড়িতে থাকতে পারি না।” তাঁর মা সুষমা মণ্ডল বলেন, “কারও সঙ্গে কথা বললেই তাকে বলছে, ওর সঙ্গে কথা বলবি না। বললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বাথরুম ভেঙে দিয়েছে। জমি পড়েই রয়েছে। চাষ করতে দেয় না। অশোক কোলের লোকেরা এমন করছে। ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি। থানায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তৃণমূল পরিচালিত খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি মিন্টু পাল বলেন, “ঘটনাটা আমাদের জানা নেই। তবে বয়কট করা আমাদের সরকার কিংবা দল সমর্থন করে না। যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে উপরমহলে জানাব। তবে সম্পত্তি নিয়ে একটা গন্ডগোল হচ্ছে বলে জানি। বয়কটের বিষয়টা জানি না। এমন হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিষয়টি নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুশান্ত বেরা বলেন, “বাংলায় মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি করা ও বিজেপির সমর্থক, দু’জনেই শাসকদলের কাছে অপরাধী। আর সেই কারণেই তাঁদের অত্যাচার করা হচ্ছে। তৃণমূল ভাবছে, পশ্চিমবঙ্গটা তাদের বাপের। তারা ছাড়া আর কেউ থাকবে না। তাই অত্যাচার করছে। ওই পরিবারকে যাতে সামাজিক বয়কট থেকে মুক্ত করা হয়, তার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।”