কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
একটি নির্দিষ্ট খুচরো ওষুধ বিক্রেতা সংস্থার কাছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ওষুধ বিক্রি করতে না চাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড শিলিগুড়ির ক্ষুদিরামপল্লিতে। ওই খুচরো ওষুধ বিক্রেতা সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে পাইকারি ব্যবসায়ীদের একাংশ রীতিমতো হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়াতেই ক্ষুদিরামপল্লির ব্যবসায়ীরা সমস্ত দোকান বন্ধ করে দেন। এদিকে, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় শিলিগুড়ি থানার বিরাট পুলিশবাহিনী। ইতিমধ্যেই দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেছে।
জানা গিয়েছে, ওই খুচরো ওষুধ বিক্রেতা সংস্থাটি শিলিগুড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় দোকান খুলে ছাড় দিয়ে খুচরো ওষুধ বিক্রি করছে। আর প্রত্যন্ত এলাকায় ছাড় দিয়ে ওষুধ বিক্রির বিষয়টি পাইকারি ব্যবসায়ীদের একাংশ ভালোভাবে নেয়নি। এর আগেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ওই সংস্থার কাছে ওষুধ বিক্রি করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুনঃ যাতায়াত যতবার খুশি; এই কার্ড হাতে থাকলে
কিন্তু ওই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, এদিন ওষুধের অর্ডার দিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সকাল থেকে ফোন করা হচ্ছিল। কিন্তু কেউ ফোন তুলছিলেন না। সেই কারণে সংস্থার কর্মকর্তারা তাঁদের কর্মীদের পাইকারি দোকানে ওষুধ নিতে পাঠান। কিন্তু কেউ ওষুধ দিতে না চাওয়ায় কর্মীরা সেটির একটি ভিডিও করে রাখেন। আর তখনই ওই সংস্থার কর্মীদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর ওই কর্মীরা ফিরে গিয়ে বিষয়টি জানাতেই সংস্থার সমস্ত কর্মীরা একত্রিত হয়ে ক্ষুদিরামপল্লিতে চলে আসেন। যার জেরে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়।
এদিকে, পরবর্তীতে দু’পক্ষের সদস্যের নিয়ে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) শিলিগুড়ি অফিসে বৈঠকে বসেন। তিনি বলেন, ‘দু’পক্ষই যাতে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমস্যা নিয়ে মিটিয়ে নেয়, সেই কথাই বলেছি।’
ওই খুচরো ওষুধ বিক্রেতা সংস্থার কর্ণধার বলেন, ‘কী কারণে মারধর করা হল, তা শুনতেই আমাদের কর্মীরা ক্ষুদিরামপল্লিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে আবার তাঁদের মারধর করা হয়েছে। ওষুধে ছাড় দেওয়ার কারণেই আমাদের উপর পাইকারি ব্যবসায়ীদের আক্রোশ। জনসাধারণের স্বার্থে আমরা ওষুধে ছাড় দেওয়া শুরু করি। ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে ওষুধ বিক্রি করছি। বিনা পয়সাতেও যদি আমরা ওষুধ দিই, সেটা আমাদের বিষয়।’
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নীরজ চোপড়া, প্রথম থ্রোতেই যোগ্যতা অর্জন
যদিও বিসিডিএর তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ওই সংস্থার কর্মকর্তারা প্রায় ১৫০ জন বহিরাগতদের নিয়ে পাইকারি মার্কেটে এসেছিল। তাঁরা এসে গালিগালাজ, মারামারি করেছে। বিসিডিএর শিলিগুড়ি জোনের সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ওষুধ ওই সংস্থার কাছে বিক্রি করব। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু শর্ত থাকবে। কিন্তু তাই বলে বহিরাগতদের নিয়ে এসে বাজারের মধ্যে মস্তানি করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।’ বিসিডিএর সদস্য শুভেন্দু ভাওয়াল বলেন, ‘এমনিতে জিএসটি নিয়ে আমরা সমস্যায় রয়েছি। যে ওষুধ ১২ শতাংশ জিএসটি দিয়ে কিনে এনেছি, সেগুলি এখন আমাদের ৫ শতাংশ জিএসিটি দিয়ে লোকসান করে বিক্রি করতে হবে। সরকার কবে সেই লোকসানের টাকা ফিরিয়ে দেবে জানি না। সেই কারণে আগামী কয়েকদিন ওষুধের সরবরাহ কিছুটা কম হবে। ওই সংস্থার কথামতো তো আমরা ব্যবসা করব না।’ যদিও এদিন পরে ক্ষুদিরামপল্লির ব্যবসায়ীরা ফের দোকান খুলে দেন।