“নীরব পৃথিবী চায়” (Part: 5)
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
দরজা ঠেলে বাড়ীর ভিতরে ঢুকতেই নরেনের ভিতরটা ছ্যাক করে নেয়। ‘কি করে মা আর বোনকে আমার ইন্টারভিউ এর কথাটা বলবো’ এই চিন্তায় করতে থাকে নরেন। মায়ের বিছানার কাছে আসতেই নরেনের জিব আরষ্ঠ হয়ে যায়, মুখ থেকে কোন কথা বার হয় না। মায়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখে, ভয় করে সে, পাছে তার সব ব্যর্থতা তার মা জানতে পারে। তাই সে মনে মনে ভাবে একবার মাকে সব কথা খুলে বলবে আবার ভাবে না।
“কেমন আছো মা ?” কোনরকমে ব্যাপারটা চাপা দেওয়ার জন্য মাকে জিজ্ঞেস করে।
“ভালো, তোর ইনটারভিউ কেমন হলো?”
“ভালো।”
আরও পড়ুন: Jadavpur University: মার্কশিট না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু কাদের?
“উনারা তোকে কি কি জিজ্ঞেস করলেন? তুই তার সব সঠিক উত্তর দিয়েছিলি তো?”
“হাঁ মা, উনারা যা যা প্রশ্ন করেছিলেন তার তার সঠিক উত্তর দিয়েছিলাম, কিন্তু ……”
“কিন্তু কি রে ! কিন্তু বলো থেমে গেলি কেন ? তাহলে চাকরীটা ……”
“জানি না মা, সরকারের ব্যাপার- স্যাপার কিছুই বুঝি না।” মায়ের কাছ থেকে একপা এগিয়ে গিয়ে আবার বলে, “তবে হতেও পারে আবার নাও হতেও পারে। তারপর……” নরেনের কথাটা শেষ করার আগেই সুনিতা কখন যে দরজার একটা পাল্লাকে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে নরেন বুঝতে পারেনি। দাদার কথা শুনে কেঁদে উঠে, তাই দেখে নরেন বোনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বোনের মাথায় হাত রেখে বলে, “দূর পাগলী, কাঁদতে আছে। একটা সামান্য কাজের জন্য…….. যদি চাকরীটা নাই বা হলো, তাতে ক্ষতি কি আছে, যা ভিতরে গিয়ে আমার জন্য খাবার নিয়ে আই, আমার খুব খিদে পেয়েছে।” বলে কোনরকমে কৃত্রিম হাসি দিয়ে মনের গভীরে যত দুঃখ, ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। আজ তার এই অন্ধ বোন আর অসুস্থ মাকে নিয়ে তার যত চিন্তা, নাহলে কবে সে কোথায় চলে যেত তা কেউ খোঁজখবর পেত না।
আরও পড়ুন: Kolkata: শ্রীচৈতন্য রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্মেলন
নরেন জামাপ্যান্ট বদলিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে খাবারের থালাটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খেতে বসে, এক খাবল ভাত মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বোনকে বলে, “সত্যি বোন, তোর হাতের রান্না এমন অমৃত যে যেই খাবে সেই পছন্দ করবে। তবে কেন যে …….. “, কথাটা শেষ করতে না দিয়ে সুনিতা বলে উঠে, “থাক দাদা থাক, আর তোমাকে আমার গুণ গায়তে হবে না, দয়া করে চুপচাপ খেয়ে আমাকে উদ্ধার করে দাও। ”
“ঠিক আছে বোন, তাই হবে।” এই বলে নরেন চুপচাপ খাবার খেতে থাকে।
খাবার খাওয়ার পর মায়ের কাছে বসে মায়ের কপালে হাত দিয়ে নরেন চমকে যায়। মায়ের সারা শরীর এত গরম। শরীর থেকে যেন আগুন ছিটকে পড়ছে। নরেন তাড়াতাড়ি চুপ্পল জোড়া পায়ে দিয়ে দরজার কাছে যেতেই পিছন দিক থেকে চঞ্চলাদেবী বল উঠেন, “এই রাত দুপুরে কোথায় যাবি ?”
“কেন? ডাক্তারখানা মা।”
“ডাক্তারখানা কি জন্যে?”
“কেন ? তোমার সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আর তুমি কিনা বলছো কোথায় যাচ্ছিস, না মা না, এখন ডাক্তার ডেকে আনলে কাল সকালে তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
“শুন পাগলের কথা শুন। এই রাত দুপুরে ডাক্তার তোর জন্য কি বসে থাকবে, কাল সকালে যাবি তখন ডাক্তার পাবি। এখন লক্ষীছেলের মতো শুবি যা। গুরুজনদের কথা শুনতে হয়।”
“কিন্তু মা, তোমার যে ……”, ছেলের কথা শেষ না করতে দিয়ে চঞ্চলাদেবী ধমক দেন, তখন বাধ্য ছেলের মত নরেন চপ্পল জোড়া খুলে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। চঞ্চলাদেবী বুঝতে পারেন তাদের পারিবারিক অবস্থা, তাই বাধ্য হয়ে ছেলেকে ধমক দেন।