সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
এক রাতের বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়েছে জল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। একইভাবে জল বেড়েছে কালজানি নদীতে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তুফানগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা কালজানি নদী লাগোয়া ঝাউকুঠি ও ঝলঝলি দিয়ে গোরু পাচারের তৎপরতা বাড়িয়েছে পাচারকারীরা।
আরও পড়ুনঃ সমাজসেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন; রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেলেন শিলিগুড়ির অনুপ
এই দুই এলাকা হয়ে গোরু পাচারের চেষ্টা করা হয়। যদিও বিএসএফের তৎপরতায় দুই জায়গা থেকে আটক করা হয় দুজন পাচারকারীকে। উদ্ধার করা হয় ছ’টি গোরু। বাজেয়াপ্ত হয় নগদ টাকা। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সকালে ওই দুজনকে তুফানগঞ্জ থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তুফানগঞ্জের এসডিপিও কান্নেধারা মনোজ কুমার জানান, মঙ্গলবার সকালে বিএসএফের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিনই ধৃতদের তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।
তুফানগঞ্জের দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঝবরাবর কালজানি নদী প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীর পাশে নির্দিষ্ট স্থান বেছে গোরু পাচার করা হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীতে জল বাড়লেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টির পর পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এলাকাবাসীর কথায়, তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট সহ একাধিক হাট থেকে গোরু এনে নদী সংলগ্ন ডেরায় রাখা থাকে। সন্ধ্যা হতেই বিএসএফের ‘ঢিলেঢালা’ নজরদারিকে কাজে লাগিয়ে গোরুগুলিকে নদীর ধারে আনা হয়। এরপর বাইকের টিউব ফুলিয়ে তার সঙ্গে গোরু বেঁধে দেওয়া হয়। নদীর স্রোত বুঝে গোরুগুলি ছেড়ে দেওয়া হয়। গোরুগুলি বাংলাদেশ সীমান্তে চলে গেলেই ওপারের পাচারকারীরা নদী থেকে সেগুলি তুলে নেয়। যদিও রাতে বিএসএফের তৎপরতায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বিএসএফ সূত্রে খবর, ঝলঝলি বিওপি ক্যাম্পের অন্তর্গত দাসপাড়া থেকে কালজানি নদী দিয়ে গোরু পাচারের উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল কয়েকজন। টহলরত অবস্থায় পাচারকারীদের গতিবিধি জওয়ানদের নজরে আসে। পাচারকারীদের পাকড়াও করতে গেলে বিএসএফের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে তারা। এরপরই চারটি গোরু সহ আমির শেখ নামে সাহেবগঞ্জ থানার অন্তর্গত শালমারার বাসিন্দা এক পাচারকারীকে আটক করেন জওয়ানরা। তবে আমিরের সঙ্গে থাকা আরও চারজন পাচারকারী পালিয়ে যায়। ওই চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে রাতে বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ঝাউকুঠি এলাকা হয়ে গোরু পাচারের চেষ্টা চলছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিএসএফ জওয়ানরা অভিযান চালিয়ে রিয়াজুল হক নামে এক পাচারকারীকে পাকড়াও করেন। তাঁর কাছ থেকে দুটি গোরু, কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট এবং দশ হাজার পাঁচশো টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা নদীপথে নজরদারি আরও বাড়িয়েছি। জলস্ফীতি যতই হোক, পাচার রুখতে আমরা তৎপর।’