মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার ‘প্রাণ ভ্রমরা’ কি লুকিয়ে তাঁর দু’টি মোবাইল ফোনে? এখন লাখ টাকার প্রশ্ন সেইটাই। কারণ, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-সিবিআই (ED-CBI) যতবারই জীবনের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছে, ততবারই নিজের ফোন পুকুরে ছুঁড়ে ফেলেছেন বিধায়ক। এবারও তাঁর অন্যথা হয়নি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি তল্লাশি চালাতেই ফের নিজের ফোন পুকুরের দিকেই ছোড়েন বিধায়ক। তবে এবার ফোন জলে না পড়ে ফোন পড়ে যায় পুকুর পাড়ে। যদিও, পরে বিধায়ক অস্বীকার করেছেন সেই কথা। কিন্তু বারবার এই ফোনের তথ্য কেন নষ্ট করতে চাইছেন বিধায়ক? ফোনের ভিতর কোন গুপ্তধন রয়েছে?
২০২৩ সালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিধায়কের কান্দির বাড়ি গিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। রীতিমতো চলে চিরুনি-তল্লাশি। আর সেই তল্লাশির ফাঁকে নাটকীয় মোড়। জীবন ছাদে উঠে নিজের সর্বক্ষণের ব্যবহারের দু’টি মোবাইল ফোন তিনি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ওই পুকুরেই। এরপর দু’দিন ধরে পাম্প চালিয়ে, কাদা-জল ঘেঁটে দু’টি মোবাইল উদ্ধার করে সিবিআই। তার পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তৃণমূল বিধায়কের মোবাইল থেকে উদ্ধার কল রেকর্ড। সেখান থেকেই বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছিল তারা।
সংশ্লিষ্ট কথোপকথন থেকে জানা যাচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে চ্যাটে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার জীবনের। চাকরিপ্রার্থী টাকা ফেরত চাইলে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগও ওঠে জীবনের বিরুদ্ধে। কল রেকর্ডটি ৮ই অক্টোবর ২০২২ সালের। মোট ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের কল রেকর্ড এসেছে হাতে।
আরও পড়ুনঃ টেরাকোটা বিশ্বের দরবারে! বিশ্বমঞ্চে পাঁচমুড়ার টেরাকোটা
D (চাকরিপ্রার্থী): হ্যালো স্যর, শুভ বিজয়া। আপনি পুজোর মধ্যে সব টাকা ফেরত দেবেন বলেছিলেন..
জীবনকৃষ্ণ সাহা: পুজোর মধ্যে নয়, দ্বাদশী ত্রয়োদশীর মধ্যে হয়েছিল কথা। তুমি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিও। আমি ট্রান্সফার করে দেব। কাল ব্যাঙ্ক খুলুক, সরি কাল না পরশু সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। পেয়ে যাবে।
D: ব্যাঙ্কে দেবেন?
জীবনকৃষ্ণ সাহা: হ্যাঁ ব্যাঙ্কে দেব। তোমার জন্য লোন করতে হল। লোন তো হল না। তোমাকে ৬ দেব আপাতত। বাকি পরে দেব।
D- পরে কবে স্যর?
জীবনকৃষ্ণ সাহা: পরে কবে দেখে নিচ্ছি। জায়গা টায়গা বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো হল। আস্তে ধীরে নিতে হবে। একবারে পারব না। আমাকে জানো, আমি এক কথায় মানুষ।
D- আপনি বলেছিলেন একেবারে দেবেন..
জীবনকৃষ্ণ সাহা: একবারে দেব বলেছিলাম। কিন্তু এখন কেউ শুনতে চাইছে না। যে টাকা পাবে সবাইকে অর্ধেক অর্ধেক করে দিয়েছি। শোনো তোমার অ্যাকাউন্টটা কিছু নয়। একজন ১৭ পাবে তাঁকে ৭ দিতে হবে। তুমি ১২ পাবে ৬ দিচ্ছি। আসানসোল, সিউড়ি সবাই ১৭-১৮ পাবে। তাদের অর্ধেক-অর্ধেক দিয়েছি। টাকা যখন দিতে লেগেছি টাইম লাগবে দিয়ে দেব। বেশি খিটিমিটি করলে দেব না, যা পারবা করবা এই হচ্ছে ঘটনা।
আরও পড়ুনঃ লুকিয়ে পাড়ার মহিলাদের স্নানের ভিডিও! ধরা পড়ল যুবক!
D- না না সে তো কী আর করব। স্যর আপনি তো আছেন…
জীবনকৃষ্ণ সাহা: আমি একটা কথা বললাম। একমাত্র মার্কেটে আমি দিয়েছি। আর তো পরে কেউ দেয় না। আমি পুলিশকে জানিয়েছি, পুলিশ বলেছে, আমি তো নিতে যাইনি। বাড়িতে এসে টাকা দিয়েছে। তাই আমি যেন চুপ করে বসে থাকি। কিন্তু আমি তো তা নই…। ঠিক আছে, শোনো বেশি কিছু করবা তো আমি কিন্তু FIR করে দেব। চুপচাপ। আমি বলেছি টাকা নিতে হবে দু’এক দিনের মধ্যে.. তোমাকে অর্ধেক দিয়েছি। বাকি টাকাটাও ধীরে ধীরে দিয়ে দেব।