কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকায় ধান, আলু, সবজি ও ফুল চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর চাষের জমি এখনও জলের তলায়। যার ফলে বাজারে আমদানি কমেছে। আর এতেই আলু সহ সমস্ত সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। শিলিগুড়ির খুচরো বাজারে প্রতিটি সবজির দামই কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখা হচ্ছে বলে কৃষি দপ্তর জানিয়েছে। অন্যদিকে, বাজারে সমস্ত সবজির দাম বাড়লেও কৃষি বিপণন দপ্তরের কাছে কোনও খবরই নেই। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির সচিব অনুপম মৈত্র বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির খবর পাইনি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনে বাজারগুলিতে টাস্ক ফোর্সের অভিযান হবে।’
ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান সহ প্রচুর সবজির চাষ হয়। বর্তমানে এখানে বিঘার পর বিঘা জমিতে আমন ধানের বিভিন্ন প্রজাতির চাষ হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডি, সর্ষে, মুলো, পালং, রাই শাক জমিতে রয়েছে। এই ব্লকে প্রথাগত কৃষি ফসলের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে গাঁদা ফুলের চাষ অনেকটাই বেড়েছে। কালীপুজোর সময় থেকেই গাঁদা ফুলও উঠতে শুরু করেছে। জমিতে আমন ধানও পেকে রয়েছে। কেউ ধান এক সপ্তাহ আগে কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছেন। কেউ আবার ধান কাটবেন বলে স্থির করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এবার ধান, সবজি এবং ফুল থেকে ভালো লাভের আশায় বুক বাঁধছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে প্রায় সমস্ত চাষের জমিই জলের তলায় চলে গিয়েছে। ফলে ধান, সবজি জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। অনেক জায়গায় গাঁদা ফুলের গাছও নষ্ট হয়েছে। কিছু এলাকায় ফুল ঠিক থাকলেও সেগুলির মধ্যে এতটাই জল জমে রয়েছে যে, পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোদালিপাড়ার কৃষক অসিত মজুমদার আমন ধানের লোকনাথ এবং পারিপোসা প্রজাতির চাষ করেছেন। অর্ধেক জমির ধান কেটে জমিতেই রেখে দিয়েছিলেন। তার পরেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। অসিত বলছিলেন, ‘ধান কাটার পর মাঠেই কয়েকদিন রেখে দিতে হয়। আমিও সেটাই করেছিলাম। শুক্রবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, পুরোটাই জলের তলায়। শুধু ধান নয়, সর্ষে, পালং, ভেন্ডি সবকিছুই নষ্ট হয়েছে। প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লাম। এই ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না।’
একইভাবে গজলডোবা, মিলনপল্লি এলাকায় জমিতে থাকা পটলও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফাঁসিদেওয়ার কৃষক মহানন্দ মণ্ডল তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলু অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই মাঠে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সমস্ত বীজ পচে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। ভুসিভিটায় দেখা গেল, গাঁদা ফুল চাষের জমিতে জল। টানা বৃষ্টিতে ফুলের গাছগুলি ঝিমিয়ে পড়েছে। ফুলচাষি সুমন্ত বিশ্বাস বললেন, ‘সমস্ত ফুলই নষ্ট হয়ে গেল।’ নির্মলজোত, টাওয়াজোত এলাকায় একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আজ রাস পূর্ণিমা; ব্যবসায় বাজিমাত করবে এই চার রাশি
বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হওয়ায় শিলিগুড়ির বাজারে আলু সহ অন্যান্য সবজির দাম বাড়ছে। বিধান মার্কেট, সুভাষপল্লি, ফুলেশ্বরী বাজার, চম্পাসারি সুপার মার্কেট সর্বত্রই জ্যোতি আলু কেজি প্রতি ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাঁচা লংকা ১২০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, ভেন্ডি ১০০ টাকা, পালং শাক ১২০ টাকা, কাঁচা পেপে ৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে। বিধান মার্কেটে দাঁড়িয়ে হাকিমপাড়ার অনীতা দত্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, ‘বৃষ্টি হল আর সব সবজির দাম বাড়িয়ে দিল। এই যে আলুর দাম ২৫ টাকা কেজি করেছে, আর এই দাম সহজে নামবে না।’ ফুলেশ্বরীর সবজি বিক্রেতা বিক্রম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘গজলডোবা, হলদিবাড়ি থেকেই বেশি সবজি আসে। বৃষ্টিতে সেখানকার সমস্ত ফসল নষ্ট হয়েছে। আমাদেরও বেশি দামেই সেসব কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে।’ বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ী রথীন মণ্ডলের বক্তব্য, ‘পাইকারি বাজারে আলুর দাম বাড়ায় খুচরো ২৫ টাকা বিক্রি না করলে আমাদের কিছুই লাভ থাকবে না।’
শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল কমিশন এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবকুমারের অবশ্য আশ্বাস, ‘আলু সহ সব সবজির পাইকারি দাম বেড়েছে। কেননা বৃষ্টির জেরে এরাজ্য এবং বিহারের অনেক জায়গা থেকে আলু, সবজি নিয়ে গাড়ি আসতে পারেনি। বৃষ্টি কমেছে। কাজেই দাম কমবে বলেই আশা করছি।’





