কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
শিলিগুড়ি আরও নির্মম। চোর সন্দেহে মাঝরাতে এক তরুণকে লাঠি, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল। বৃহস্পতিবার রাত ৩টে নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি জংশন চত্বরে নির্মীয়মাণ একটি বহুতলের কাছে ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে এনজেপি থানার পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞাতপরিচয় ওই তরুণকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ এরপর এলাকায় ধরপাকড় শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে আটজনকে আটক করে প্রথমে এনজেপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ নতুন করে দানা বাঁধছে নিম্নচাপ! দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি, দুর্যোগ উত্তরেও
পরবর্তীতে এনজেপি জিআরপিতে মামলা দায়ের হওয়ায় জিআরপি থানার পুলিশ ওই আটজনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ধৃতরা হলেন মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার, গৌতম চক্রবর্তী, আয়ুব আলি, করণকুমার ঝা, এমডি আফজল, অজয় মণ্ডল, সন্দীপ ঠাকুর ও সঞ্জীবকুমার দাস। ধৃতদের মধ্যে সঞ্জীব এলাকার নিরাপত্তারক্ষী, সন্দীপ নিরাপত্তারক্ষী প্রদান করা সংস্থার মালিক, মৃত্যুঞ্জয় আর্থমুভার ও আয়ুব ট্র্যাক্টরচালক। অভিযোগ, নিরাপত্তা সংস্থার মালিক সন্দীপ ঠাকুরকে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি তখন পুলিশকে খবর দেননি। তাই তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ রেলওয়ে পুলিশ (শিলিগুড়ি) কূঁয়র ভূষণ সিংয়ের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। ফোন না ধরায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে এনজেপি জিআরপির আইসি প্রেমাশিস চট্টরাজ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ঘর গোছাচ্ছে TMCP, প্রস্তুতিও নাকি শুরু
পুলিশ সূত্রে খবর, কাজের জন্য চন্দ্রভূষণ সিং নামে এক ব্যক্তি রাত ৩টে নাগাদ এনজেপি স্টেশনের দিকে আসছিলেন। বেশ কয়েকজন মিলে এক তরুণকে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছেন বলে তিনি সেই সময় দেখতে পান। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন করে স্থানীয় এনজেপি থানায় ঘটনাটি জানান। খবর পেয়েই এনজেপি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জিআরপি থেকেও পুলিশকর্মীরা আসেন। ততক্ষণে অভিযুক্তরা এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ দ্রুত আহত ওই তরুণকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু গাড়িতেই ওই তরুণের মৃত্যু হয়। মেডিকেলে পৌঁছানোর পর সেখানে ওই তরুণকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপরেই এনজেপি চত্বরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের ধরে এনজেপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিআরপিতে অভিযোগ করা হবে বলে শুক্রবার সকালে জিআরপি এবং কমিশনারেটের আধিকারিকরা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো প্রত্যক্ষদর্শী চন্দ্রভূষণ জিআরপি থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মানের তৈরি হতে যাওয়া এনজেপি জংশনে এই ধরনের ঘটনায় এলাকার নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দেশ–বিদেশের বহু যাত্রী এই জংশনে আসেন। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরাই যদি এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তবে সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।