কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
ছটপুজোর রাতে জুয়ার আসর ওঠাতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনায় এখনও গ্রেপ্তারির কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে এরপরেও পুরনিগমের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন ঘাটে জুয়ার আসর দিব্যি বসছে। শুক্রবার ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন ঘাটে যেতেই নজরে পড়ল, দেদারে চলছে জুয়া। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ ক্র্যাশ করে গিয়েছিল, নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করল বাংলার সিইও দফতর; আপনার প্রশ্নের সব উত্তর পাবেন এখানেই
নাগরিকরা বলছেন, শুধু ওই ওয়ার্ডেই নয়, গোটা শহরে নদীর চরজুড়েই এধরনের জুয়ার আসর নিয়মিত বসছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও পুরোপুরি বন্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলছেন, ‘জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান নিয়মিত জারি রয়েছে। এই অভিযান আরও বাড়ানো হবে।’
সোমবার রাতে জুয়া চলার অভিযোগ পেয়ে পুরনিগমের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে আশিক ঘাট রোডে অভিযান চালিয়েছিল ভক্তিনগর থানার পুলিশ। সেখানে হেনস্তার শিকার হন এএসআই পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা। পুলিশকর্মীরা এক অভিযুক্তকে পাকড়াও করলেও জুয়ার আসরে জড়িত বাকিরা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। বুধবার ওই এলাকায় যেতেই নজরে পড়ল, দিব্যি দিনের আলোয় জুয়ার আসর চলছে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই অবশ্য ওই জুয়ার আসরে বসা তরুণরা সতর্ক হয়ে গেলেন। পালটা প্রশ্ন করতে লাগলেন, ‘কী কারণে আপনি এখানে এসেছেন?’ সোমবারের ঘটনার পরেও ফের আসর বসেছে? প্রশ্ন করতেই ওই তরুণদের একজন বললেন, ‘পুলিশ এলে নদী দিয়ে পালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুনঃ পাশের হার সর্বাধিক; উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বের ফলঘোষণা
শুধু ওই আশিক ঘাটই নয়, ওয়ার্ডে থাকা শিবশক্তি ঘাট, বিদ্যাচক্র কলোনি ঘাট- সব জায়গায় একই ছবি। বিদ্যাচক্র কলোনির বাসিন্দা মঞ্জু দাস বলছিলেন, ‘এলাকারই কিছু ছেলে এই জুয়ার আসরগুলো বসায়। সেখানে আবার বাইরে থেকেও অনেকে আসে। ভয়ে ওই এলাকায় যাওয়া যায় না।’ একই কথা বলছিলেন পুরনিগমের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শনগরের বাসিন্দা গোবিন্দ দাসও। ঘাট সংলগ্ন এলাকাতেই তাঁর বাড়ি রয়েছে। ক্ষোভের সুরে বলছিলেন, ‘বেশি প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা অত্যাচার করে। প্রতিবাদীর বাড়িতে যখন-তখন ঢিল পড়ার ঘটনা তো সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালায়। তারপর এক-দু’দিন আসর বসে না। দিন দুয়েক কাটলেই ফের যে-কে-সেই। অভিযোগ চর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
এয়ারভিউ মোড় সংলগ্ন মহানন্দা সেতুর নীচে কুলিপাড়া ও গুরুংবস্তির সংযোগকারী অংশেও নদীর চর এলাকায় প্রায়দিনই একেবারে কাপড় পেতে জুয়ার আসর বসছে। শহরের বাসিন্দা অবিনাশ দাস বলছিলেন, ‘আসলে নদীর চর বরাবরই জুয়া-মদের আসর বসানোর মুক্তাঞ্চল। খালি আমাদের এলাকা নয়, শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া নদীর চরের কোনও অংশই তা থেকে বাদ যায়নি। পরিস্থিতি এখন এমনই হয়েছে যে পুলিশ প্রশাসন অভিযান করতে গেলেও পালটা হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে।’ কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার।





