ঘড়ির কাঁটা যেন এগোচ্ছিলই না! রুদ্ধশ্বাস তিন ঘণ্টা। বাণিজ্যনগরীর বুকে অপহৃত ১৭ শিশুর ভবিতব্য কী হতে চলেছে, তা নিয়ে চিন্তায়-আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছিলেন সকলে। অবশেষে সফল অভিযান। পুলিশ উদ্ধার করল বন্দি বানিয়ে রাখা ১৭ শিশুকে। অপহরণকারীর মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তোলপাড় মুম্বই। আরএ স্টুডিয়ো (RA Studio)-তে সিনেমার অডিশন দিতে এসে অপহৃত ১৭ শিশু ও বৃদ্ধ। বন্দি বানিয়ে রাখা হয়েছিল আরও কয়েকজনকে। আর এই সবই করেছিল একজন, রোহিত আর্য্য নামক ৩৮ বছরের এক যুবক। যে হল রুমে সকলকে বন্দি বানিয়ে রাখা হয়েছিল, সেখানে চতুর্দিকে লাগিয়ে রেখেছিল সেন্সর। বারবার হুমকি দিচ্ছিল আগুন লাগিয়ে দেওয়ার।
শেষে পুলিশ ৩৫ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে সকল শিশু সহ বন্দিদের উদ্ধার করে। অপহরণকারী রোহিত আর্য্যকে গুলি করে নিকেশ করা হয়। ঠিক কী ঘটেছিল, গোটা ঘটনাক্রম তুলে ধরেছে পুলিশ-
দুপুর ১২টা: স্টুডিয়োতে পরিচিত মুখ রোহিত। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা নাগাদ রোহিত আরএ স্টুডিয়োতে আসে।
দুপুর সাড়ে ১২টা: অডিশন দিতে আসে ১৭ শিশু।
দুপুর ১টা: যে হল রুমে অডিশন হওয়ার কথা ছিল, তা ভিতর থেকে লক করে দেয়। বন্দি বানায় সকলকে। আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকে শিশুরা। জানালায় ধাক্কা দিয়ে সাহায্যের আর্জি জানায়।
দুপুর দেড়টা: শিশুদের অভিভাবক ও পথচলতি মানুষের থেকে ফোন পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। শুরু হয় পণবন্দিদের মুক্ত করার জন্য় দর কষাকষি। দুই ঘণ্টা ধরে রোহিতকে শান্ত করার, তাঁর কথা শুনে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। কী কী দাবি করেছিল রোহিত, সে বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকে গেলেও পুলিশ ক্রমাগত তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রোহিত আর্য্য় নামক ওই যুবক প্রতি মুহূর্তেই আরও অস্থির হয়ে ওঠে। বন্দিদের জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
দুপুর সাড়ে ৩টে: কোনওভাবেই রোহিতকে রাজি করানো যায় না বন্দিদের মুক্তি দিতে। পুলিশ দমকলকে ডাকে।
৩টে ৪৫ মিনিট: দমকল আসে। বাথরুমের ছোট জানালার কাচ ভেঙে পুলিশ বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে।
৩টে ৫০ মিনিট: কুইক রিঅ্যাকশন টিমের ৮ জন কম্যান্ডো ঢুকে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ ১৯৫৮ সালের ৯ জুলাইয়ের রাত! আলাস্কা উপসাগর, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সুনামি!
বিকেল ৪টে: রোহিত কম্যান্ডোদের দেখতে পেয়েই গুলি চালায়। আসল বন্দুক ভেবে পাল্টা গুলি চালায় কম্যান্ডোও। একটি গুলি রোহিতের বুকে লাগে।
বিকেল ৪টে ১০ মিনিট: রোহিতকে বের করে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
বিকেল সাড়ে ৪টে: ১৭ শিশু সহ মোট ১৯ জন পণবন্দিকে সুরক্ষিতভাবে স্টুডিয়ো থেকে বের করে আনা হয়।
আরও পড়ুনঃ এক ক্লিকেই রেজাল্ট শুধুমাত্র বঙ্গবার্তায়; আজ প্রকাশিত হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের ফল
পুলিশ জানিয়েছে, কম্যান্ডোরা যখন ঢোকে, তখন দেখে শিশুদের হলের এক কোণে বসিয়ে রাখা রয়েছে। চারিদিকে ক্য়ামেরা, লাইট ওলট-পালট হয়ে পড়েছিল। অভিযুক্তের হাতে যে বন্দুক ছিল, তা আসলে এয়ারগান ছিল। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যাল ও লাইটার ছিল, বারবার পণবন্দি শিশুদের জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল অভিযুক্ত।
পুলিশ যাতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য রোহিত সমস্ত দরজা ও জানালায় মোশন সেন্সর লাগিয়েছিল। একমাত্র বাথরুমের জানালাতেই মোশন সেন্সর ছিল না। সেই পথ দিয়েই কম্যান্ডোরা ঢোকে। সিসিটিভি ক্যামেরার মুখও এমনভাবে ঢুকিয়ে রেখেছিল, যাতে ধরা না পড়ে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরেই স্টুডিয়োয় কাজ করত, সেই কারণে সকলে তাঁকে চিনত। তাঁর একটি ইউটিউব চ্যানেলও আছে।





