বিশ্বকর্মা দেবকে বলা হয় দেবশিল্পী ও ব্রহ্মাণ্ডের স্থপতি। পুরাণে উল্লেখ আছে, দেবতাদের মন্দির, রথ, অস্ত্রশস্ত্র, স্বর্গীয় প্রাসাদ, এমনকি দেবরাজ ইন্দ্রের সুবিখ্যাত বজ্র অস্ত্রও তাঁরই সৃষ্টি।
ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মাকে সৃষ্টির কর্তা বলা হয়েছে।
আসলে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা সৃষ্টি কর্তা প্রজাপতি ব্রহ্মার এক রূপ!
ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণে, বলা হয়েছে তিনি দেবতাদের স্থপতি এবং স্থাপত্য, যন্ত্রবিদ্যা ও কারুশিল্পের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।
তাই কর্মজীবী মানুষ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কারিগর—সকলেই এই দিনে বিশ্বকর্মা দেবকে পূজা করে কর্মে সিদ্ধি ও অগ্রগতির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুনঃ শুধু বিশ্বকর্মার পুজো করলেই হবে না; বিশেষ কিছু উপায় কিন্তু করতে হবে
পূজার দিন পালনীয় কাজ
১. সকালবেলা শুদ্ধি – সূর্যোদয়ের আগে স্নান করে পরিষ্কার ও পবিত্র বস্ত্র পরিধান।
২. যন্ত্রপাতি শুদ্ধিকরণ – কারখানা, দোকান, অফিস বা বাড়ির সব যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে লাল কাপড় দিয়ে সাজানো।
৩. বিশ্বকর্মা পূজা – লাল আসনে বিশ্বকর্মার ছবি বা যন্ত্র স্থাপন করে ধূপ, দীপ, চন্দন, হলুদ ফুল, মিষ্টি প্রসাদ নিবেদন।
৪. বাস্তু শুদ্ধি – কর্মস্থল বা বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গাজল ছিটিয়ে স্থান পবিত্র করা।
৫. ঘুড়ি ওড়ানো (লোকাচার) – আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয়, যা কর্মশক্তি, স্বাধীনতা ও জীবনের উন্নতির প্রতীক।
বিশ্বকর্মা পূজার দিনে অবশ্যই পালন করুন এই বিশেষ টোটকা গুলি
১. ব্যবসার উন্নতির জন্য
পূজার দিনে ৫টি হলুদ সরষে দানা, একটি রূপোর মুদ্রা ও লাল কাপড় ক্যাশবক্সে রাখলে ব্যবসা বৃদ্ধি হয়।
২. কর্মক্ষেত্রে অশান্তি দূর করতে
অফিস বা দোকানের প্রবেশদ্বারে গঙ্গাজল ও দুধ দিয়ে আলপনা আঁকলে অশুভ শক্তি প্রবেশ করে না।
৩. গৃহে সুখ-সমৃদ্ধির জন্য
বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে বিশ্বকর্মা যন্ত্র স্থাপন করে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালালে সংসারে শান্তি আসে।
৪. দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে
যানবাহনে বিশ্বকর্মার ছবি বা যন্ত্র রাখলে দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা মেলে।
৫. ভাগ্য উজ্জ্বল করতে
রাতে পূজা শেষে ২১টি ধূপকাঠি একসাথে জ্বালিয়ে আকাশের দিকে নিবেদন করলে কর্মজীবনে ভাগ্যের দ্বার খুলে যায়।
জ্যোতিষীয় উপদেশ ও মন্ত্র
জন্মকুণ্ডলীতে শনি বা রাহুর কুপ্রভাব থাকলে পূজার দিনে বিশ্বকর্মা মন্ত্র জপ করলে বিশেষ উপকার হয়।
মন্ত্র:
ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ
প্রতিদিন অন্তত ২১ বার জপ করলে কর্মজীবনে সাফল্য আসবে।
আরও পড়ুনঃ মা শ্বেতকালীর দর্শন, এবারের পুজোতে একদিনের গন্তব্য
কারখানা বা অফিসের মূল দরজা পরিষ্কার ও আলোকিত রাখুন।
প্রবেশদ্বারে লাল ফুল ও আমপাতার তোড় রাখুন।
মনে রাখবেন ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বালানো সবসময় শুভ। তাই অবশ্যই এইটি পালন করুন।
দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লোহা বা ইস্পাতের যন্ত্রপাতি রাখলে অর্থ স্থিতি বৃদ্ধি হয়।
পুরাণকথা ও লোকাচার
পুরাণকথা
বজ্র অস্ত্র নির্মাণ: যখন ইন্দ্রকে অসুর বৃত্রাসুর বধ করতে হয়েছিল, তখন বিশ্বকর্মা ঋষি দধীচির অস্থি দিয়ে বজ্র তৈরি করেন।
শিবের ত্রিশূল ও বিষ্ণুর শার্ঙ্গ ধনুক: বিশ্বকর্মার সৃষ্টি।
লঙ্কা নগরী: বলা হয় রাবণের সোনার লঙ্কা নগরী বিশ্বকর্মার স্থাপত্যকর্ম।
লোকাচার
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশায় ঘুড়ি ওড়ানো যেন বিশ্বকর্মা পূজার বিশেষ রীতি।
অনেক কারখানায় এদিন কাজ বন্ধ রেখে যন্ত্রপাতির পূজা করা হয়।
অনেক ব্যবসায়ী এদিন থেকে নতুন খাতা ও লেনদেন শুরু করেন।
উপসংহার
বিশ্বকর্মা পূজা কেবল ধর্মীয় রীতি নয়, এটি কর্ম, শিল্প, ব্যবসা ও জীবনের উন্নতির এক মহা সুযোগ। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী এর মাধ্যমে গ্রহের অশুভ প্রভাব কমে যায় এবং বাস্তু মতে গৃহ ও কর্মক্ষেত্রে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি আসে। পুরাণকথা ও লোকাচার এই পূজাকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।