Tuesday, 17 June, 2025
17 June, 2025
HomeকলকাতাOrganisational Skills: বামের পরামর্শে রাম; বিজেপির একাধিক গুরুদায়িত্বে প্রাক্তন বামনেতারা

Organisational Skills: বামের পরামর্শে রাম; বিজেপির একাধিক গুরুদায়িত্বে প্রাক্তন বামনেতারা

কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে এমন এক নেতার উপর, যিনি বামপন্থী দলে সংগঠন সামলানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিজেপি-তে শামিল হয়েছেন।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

বছরখানেক আগেও দলের অন্দরে যখন তখন ‘বহিরাগত-বহিরাগত’ রব উঠত। সদর্পে বলা হত, ‘আদি’ অগ্রাধিকার পাবে, ‘নব্য’ ঝান্ডা কাঁধে ঘুরবে। কিন্তু পর পর নির্বাচনী ভরাডুবির জেরে বিজেপি-র সে সব ‘আদি’ তাত্ত্বিকদের অনেকের দর্পচূর্ণ হয়েছে। ফলে নিঃশব্দে বিজেপি-তে সামনের দিকে উঠে এসেছেন ‘নব্য’ তথা ‘বহিরাগত’রা। এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপি-র গোটা নেতৃত্বই ব্যস্ত সাংগঠনিক কাঠামোয় ‘স্বচ্ছতা’ আনার অভিযানে। কিন্তু সেই কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে এমন এক নেতার উপর, যিনি বামপন্থী দলে সংগঠন সামলানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিজেপি-তে শামিল হয়েছেন। তৃণমূলের মোকাবিলায় কি তা হলে বঙ্গীয় বামেদের ‘সাংগঠনিক দক্ষতা’র উপরে ভরসা রাখতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব?

‘আমার বুথ, সবচেয়ে মজবুত’ (বুথ সশক্তিকরণ) কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন রাজ্য বিজেপি-র প্রথম সারির প্রায় সব নেতা। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরাও জেলায় জেলায় যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। রাজ্যের প্রায় সব বুথে পৌঁছে ‘বাস্তব’ সাংগঠনিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করার জন্য ৫ জুলাই পর্যন্ত সময় ধার্য করা হয়েছে। এই কর্মসূচি দেখভালের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার মাথায় বসানো হয়েছে বামপন্থী দল থেকে বিজেপি-তে আগত এক নেতাকে। তা-ও এমন একজনকে, যিনি রাজ্য রাজনীতির কোনও পরিচিত মুখ নন, কোনও পরিসরেই সামনের সারিতে এসে দাঁড়ান না। বরং যে কোনও কাজই নেপথ্যে থেকে সামলাতে পছন্দ করেন। শুধু সেই পূর্বতন বামপন্থী নেতা নন, অন্যান্য দল থেকে বিজেপি-তে আগত আরও একাধিক মুখকে বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির কমিটিতে রাখা হয়েছে। সংগঠনকে ভিতর থেকে ত্রুটিমুক্ত করে তুলতে তা হলে কি ‘আদি’দের উপরে ভরসা কমেছে নেতৃত্বের? তথাকথিত বহিরাগতদের মধ্য থেকেই কি ‘ভরসাযোগ্য’ মুখ বেছে তোলা শুরু হয়েছে? আপাতত এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য বিজেপি দফতরে।

আরও পড়ুন: ‘উন্নয়ন কাকে বলে দেখে যান’! নিজের এলাকাতেই ক্ষোভের মুখে উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন

রাজ্যের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী তথা দাপুটে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করেছেন প্রবাল রাহা। ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৭ সালে তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। তাঁকে বিজেপি-তে টেনেছিলেন যিনি, সেই মুকুল রায় এখন দল, রাজনীতি এবং জনজীবন থেকে বহুদূরে। কিন্তু তাতে প্রবালের কোনও ক্ষতি হয়নি। বরং দলের দেওয়া ছোট-মাঝারি নানা কাজ নীরবে এবং প্রশ্নহীন ভাবে করে গিয়েছেন। ক্রমে নেতৃত্বের আস্থাভাজনও হয়ে উঠেছেন। এতটাই আস্থাভাজন যে, ‘নীলবাড়ির লড়াই’-এর আগে যে কাজে বিজেপি নেতৃত্ব এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেই কর্মসূচির ‘প্রমুখ’ করা হয়েছে প্রবালকে।

বঙ্গের বামপন্থীদের ‘সাংগঠনিক দক্ষতা’য় বিজেপি নেতৃত্ব আস্থা রাখছেন বলে যে খবর উড়ছে, তার সত্যতা কতটা? বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বকে সে বিষয়ে মুখ খুলতে হচ্ছে না। বরং নেতৃত্বের আস্থা যাঁদের উপর সম্প্রতি বেড়েছে, সেই বাম প্রাক্তনীরাই উড়িয়ে দিচ্ছেন সে খবর। বুথ সশক্তিকরণের ‘প্রমুখ’ প্রবাল বলছেন, ‘‘বহু বছর বামফ্রন্টকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের সংগঠনকে দুর্ভেদ্য, অপরাজেয় ইত্যাদি বলা হত, তা-ও দেখেছি। কিন্তু আশির দশক শুরু হওয়ার আগে সেই সংগঠন কোথায় ছিল?’’ প্রবালের কথায়, ‘‘১৯৭৭ সালে অপ্রত্যাশিত জয় পাওয়ার কয়েক বছর পর থেকে সংগঠন মাথাচাড়া দিল। বিরোধী রাজনীতিতে থাকাকালীন কোথায় কতটুকু সংগঠন ছিল?’’ প্রবালের বরং দাবি, বিরোধী বিজেপি এই মুহূর্তে বুথ স্তর পর্যন্ত যতটা সাংগঠনিক কাঠামো গড়েছে, ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূলেরও ততটা ছিল না।

তিনি অবশ্য একা নন। ‘আমার বুথ, সবচেয়ে মজবুত’ কর্মসূচির জন্য গঠিত কমিটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের আর এক প্রাক্তনী শশী অগ্নিহোত্রীকেও রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে কংগ্রেস প্রাক্তনী অনুপম ঘোষকেও। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবাল বা শশী সংগঠনভিত্তিক রাজনীতি করে এসেছেন। তাই সংগঠন-নির্ভর বিজেপি-তে তাঁদের কাজে লাগানো হচ্ছে। অনুপম ছিলেন কংগ্রেসে। বিজেপি-র সাংগঠনিক গতিবিধির সঙ্গে কংগ্রেসে কাজ করার অভিজ্ঞতা কোথাও মেলে না। তা হলে অনুপম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজের কমিটিতে? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রথমে জেলা, তার পরে মণ্ডল এবং সব শেষে বুথ স্তর পর্যন্ত পৌঁছে সাংগঠনিক পরিস্থিতির খাঁটি চিত্র তুলে আনতে হবে। নিয়মিত বৈঠক করতে হবে, বৈঠকে বসে হিসেব মিলিয়ে দেখতে হবে, তার ভিত্তিতে প্রয়োজনমতো নানা পুনর্বিন্যাসের ছক কষতে হবে। এ কাজে ধৈর্য প্রয়োজন। ‘ধৈর্যশীল’ এবং ‘স্থিতধী’ হিসেবে যাঁরা নেতৃত্বের নজর কেড়েছেন, তাঁদেরই বেছে বেছে এই কমিটিতে রাখার চেষ্টা হয়েছে।

আরও পড়ুন: নিয়মের বালাই নেই, উদাসীন সাধারণ মানুষ; বাংলায় বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা, চতুর্থ থেকে একলাফে তৃতীয়

বিজেপি সূত্রের এই ব্যাখ্যা অবশ্য পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কারণ, শুধু ধৈর্যের দাবি রাখার কাজেই যে তথাকথিত বহিরাগতদের সামনে আনা হচ্ছে, এমন নয়। বিজেপি-র আরও একাধিক সাংগঠনিক দায়িত্ব এখন এই তথাকথিত বহিরাগতদের উপরে বর্তাচ্ছে। শঙ্কর ঘোষ তার অন্যতম উদাহরণ। শিলিগুড়িতে এক সময়ে সিপিএমের সামনের সারির তরুণ, তুর্কি ছিলেন যে শঙ্কর, তিনি বিজেপি-র টিকিটে জিতে শিলিগুড়ির বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি শঙ্করকে। মনোজ টিগ্গা লোকসভা নির্বাচনে জিতে বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক পদে তথা বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার পর শঙ্করকেই মুখ্য সচেতক করেছে বিজেপি। ফরওয়ার্ড ব্লকের আর এক প্রাক্তনী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় তৃণমূল ঘুরে বিজেপি-তে শামিল হয়েছেন। তাঁকে বিজেপি উত্তর ২৪ পরগনা বিভাগের সাংগঠনিক আহ্বায়ক করেছে।

প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকারের ১১ বছরের কাজ জনতার সামনে তুলে ধরতে আরও একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচি দেখভালের কমিটির মাথায় রয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। কিন্তু কমিটির সদস্য সেই শশী-অনুপমেরা। সঙ্গে রায়গঞ্জের শঙ্কর চক্রবর্তী। যিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন।

রাজ্য জুড়ে এমন নানা দায়দায়িত্বে অন্য দল থেকে বিজেপি-তে আগতদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সিপিএম বা ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বামপন্থী দল থেকে যাঁরা বিজেপি-তে এসেছেন, তাঁদের উপর আস্থার ‘মাত্রা’ বেশি বলেও একাংশের দাবি। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না। তবে বিজেপি-র এক ‘আদি’ কর্মী তথা রাজ্য কমিটি সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘২০২১ আর ২০২৪ সালের দুটো বড় নির্বাচনে আমাদের দল প্রত্যাশার নিরিখে ভরাডুবির মুখে পড়েছে। দল ক্ষমতায় আসছে ভেবে যাঁরা এক সময়ে খুব উৎসাহ দেখাতে শুরু করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই কেটে পড়েছেন। অনেকে বুঝেছেন, বেশি বড় বড় কথা বলা উচিত হয়নি। দলের ভিতরে কাউকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা উচিত হয়নি। তাই বহিরাগত রব বা আদি-নব্য তত্ত্ব নিয়ে এখন কেউ বেশি হইচই করছেন না।’’

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন