কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
শনিবাসরীয় ডার্বির আগেই মোহনবাগানের চারটি ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা যুবভারতী স্টেডিয়ামে আইএফএ শিল্ড ফাইনাল বয়কট করবে না। তবে তারা জানিয়েছিল নীরব প্রতিবাদ জানাতে স্টেডিয়ামে কোনও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যাবে না এমনকি কোনও ফেস্টুন, টিফোও নয়। তবে ম্যাচ শেষে সব দুঃখ ভুলে বাগান সমর্থকরা বাঁধ ভাঙা আনন্দে মেতে উঠলেন। ইস্টবেঙ্গলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ১২৫তম আইএফ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান।
চলতি মরশুমের প্রথম দুই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। তাই অনেকেই এদিন লাল-হলুদকে এগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন মেহতাব হোসেন, বিকাশ পাঁজিরা বারবার বলেছিলেন, ডার্বিতে কোনও ফেভারিট হয় না। ম্যাচে যারা নার্ভ ধরে রাখতে পারবে, তারাই জিতবে। আর সেটাই হল এদিন। ম্যাচের নির্ধারিত সময় ও এক্সট্রাইম ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে নার্ভ ধরে রেখে পাঁচটি শটেই গোল করল মোহনবাগান। আর ইস্টবেঙ্গলের জয় গুপ্তার শট আটকে গেল বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাতে। বাইশ বছর পর আইএফএ শিল্ড জিতে বাগান সমর্থকদের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলেন হোসে মোলিনার ছাত্ররা।
৩২ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত মোহনবাগান। ম্যাকলরেনকে বক্সের মধ্যে আনোয়ার ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মেরিনার্স। কিন্তু জেসন কামিংস সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন। এর চার মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় লাল-হলুদ। রশিদের কাছ থেকে বল পেয়ে ফাইনাল থার্ডে বাড়িয়ে দেন মহেশ। এরপর আহাদাদের শট জালে জড়িয়ে যায়। বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ শরীর ছুড়ে দিলেও বল বাঁচাতে পারেননি। বাগান ডিফেন্স তখন ছিল নির্বাক দর্শক।
প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়েই (৪৫+৩) অবশ্য সমতায় ফেরে গোষ্ঠ পাল সরণির ক্লাব। লিস্টন কোলাসোর পাশ থেকে গোল করে মোহনবাগানকে ম্যাচে ফেরান আপুইয়া। ১-১ গোলের সমতাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখেন আলবার্তো রড্রিগেজ। ৫৪ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন কামিন্স। লিস্টনের বাড়ানো বলে তিনি শট মারার আগেই ক্লিয়ার করে দেন আনোয়ার। এদিন মোটেও ছন্দে ছিলেন না কামিন্স। ৫৯ মিনিটে কামিন্সকে তুলে নিয়ে রবসন রবিনহোকে নামান বাগান কোচ হোসে মোলিনা।
আরও পড়ুনঃ কোমর বেঁধে নামছে বিজেপি! পারদ চড়বে সোশ্যাল মিডিয়ায়
কিন্তু প্রথমার্ধের প্রথম ১০ মিনিট পর থেকেই শুরু হয়ে যায় টিপিক্যাল ডার্বি। দুই দলই ডিফেন্সিভ হয়ে পড়ে। ৬১ মিনিটে সাহালকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন লালচুংনুঙ্গা। ৬৪ মিনিটে পরিবর্তন আনেন লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। মাঠে নামেন হিরোশি, মিগুয়েল ও জয় গুপ্তা। এদিনই ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে অভিষেক হল জাপানি স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুসুকির। নেমেই তিনি সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর হেড তৎপরতার সঙ্গে বাঁচিয়ে দেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল। ৭৯ মিনিটে তিনি অবশ্য বল জালে জড়িয়েছিলেন, কিন্তু সঙ্গত কারণেই অফসাইড দেন রেফারি। ৮১ মিনিটে ডিফেন্স সলিড করতে থাপার পরিবর্তে দীপক টাংরিকে নামান বাগান হেডস্যার। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় এক্সট্রা টাইমে।
এক্সট্রা টাইমের শুরুতে অবশেষে মনবীর সিংকে নামালেন মোলিনা। ১৪ মিনিটে আপুইয়ার বাড়ানো বল গোলে ঠেলতে পারলেন না ম্যাকলরেন। এক্সট্রা টাইমের প্রথমার্ধেও গোল পেল না কোনও দল। অবশেষ দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। এক্সট্রা টাইমেও কোনও গোল হল না, ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারের আগে গোলরক্ষক পরিবর্তন করে ইস্টবেঙ্গল। প্রভুসুখন গিলের পরিবর্তে নামেন দেবজিৎ মজুমদার। পেনাল্টি শ্যুট আউটে প্রথমেই গোল করে ইস্টবেঙ্গলেকে এগিয়ে দিলেন মিগুয়েল। মোহনবাগানকে এরপর সমতায় ফেরালেন রবসন। এরপর গোল করতে ভুল করলেন না ইস্টবেঙ্গলের কেভিন। মনবীর গোল করে ফলাফল ২-২ করলেন। পরের শটে গোল করলেন মহেশ। গোল করতে ভুল করলেন না লিস্টনও। জয় গুপ্তার শট বাঁচিয়ে মোহনবাগানকে বাড়তি অক্সিজেন এনে দিলেন বিশাল কাইথ। পরের শটে গোল করে বাগানকে এগিয়ে দিলেন পেত্রাতোস। পরের শটে গোল করে যান হিরোশি। তবে শেষ শটে গোল করে মোহনবাগানকে টাইব্রেকারে জিতিয়ে আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন করলেন মেহতাব সিং।


                                    


