লোকসভা শূন্য। বিধানসভা শূন্য। বামেরা এখন খাতায় কলমে সত্যিই সর্বহারার দল। এহেন ভূরি ভূরি ব্যাঙ্গ, কৌতুকের মধ্যেও ‘কমরেড’দের আবেগে এক বিন্দু ভাঁটা নেই। হাওয়া অফিস বলছে, চৈত্রের শেষ লগ্নে, বৈশাখের শুরুতে কালবৈশাখীর দাপট দেখলেও দক্ষিণবঙ্গে আর বৃষ্টির কোনও ব্যাপার নেই। এ বার গরম দাপট দেখাবে। কলকাতা-সহ দক্ষিণের জেলাগুলিতে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বাড়বে তাপামাত্রা। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে কলকাতা যখন বিষাদকাতর, তখনই বামপন্থী শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর ও বস্তি সংগঠন ডাক দিয়েছে ‘বিগেড চলো’।
মাঠ ভরানোর ডাক দিতেই সংগঠনের অন্দরে আশঙ্কার কথা চালাচালি চলছিল, এই গরমে? ভরবে তো? কাঠফাটা রোদে ব্রিগেডের সিদ্ধান্ত কি যথোপযুক্ত? এমন সংখ্যালঘু প্রশ্নে কমরেডদের গুরু হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের দলের প্রতি আবেগ। দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ব্রিগেডে আসা এক সমর্থকের কথায়, তিনি আজ অবধি কোনও দিন বামেদের ব্রিগেড আসেননি, এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, “গরম? বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের রক্ত কি কম গরম নাকি? লাল পতাকায় আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আসব না?”
আরও পড়ুন: ‘মহিলারা ভীত-সন্ত্রস্ত’, অশান্তির এলাকা ঘুরে দেখে বলল মহিলা কমিশন
‘খেটে খাওয়া মানুষকে এখন খুঁটে খেতে বাধ্য করছে’। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে দলকে অক্সিজেন জোগাতে বৈশাখী দুপুরে ব্রিগেড (Brigade 2025) সমাবেশ সিপিএমের (CPIM) চার গণসংগঠনের। সেই সমাবেশ থেকে মহম্মদ সেলিম (MD Selim) তাঁর বক্তব্য শুরুই করলেন এই বলে।
বামেদের রোববারের ব্রিগেডের সমাবেশের হেভিওয়েট বক্তা সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনিই শেষ বক্তা। মঞ্চে উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। সেই আওয়াজ আরও জোরালো হল তাঁর বক্তব্যের সূচনাপর্বে।
সেলিম শুরুতেই বলেন, “যাঁরা দূরবীন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, আজকের এই ব্রিগেড তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে। কাজের জায়গার বৃত্ত ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্যে কোথাও নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানেই নিয়োগ হচ্ছে, সেখানেই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি। ২৬ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।”
বৈশাখের দুপুরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন চিন্তা ছিলই শীর্ষ নেতৃত্বের। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, “আমাদের প্রতি প্রকৃতিও সহায়। তপ্ত রোদ ওঠেনি। উঠলেও এই ভিড় বুঝিয়ে দিচ্ছে লাল ঝান্ডার প্রতি জনতার আবেগ।
সেলিম বলেন, “লাল ঝান্ডা শুধু একটা কাপড়ের টুকরো না। এই পতাকা চিটফান্ডের টাকা দিয়ে কেনা হয়নি। এরপরই রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে শুরু করেন তিনি। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে বলেন, “সাম্প্রদায়িক হিংসা যে ছড়াবে, পুলিশকে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। না হলে আমরা রাজ্যের সব থানায় এফআইআর করব।”
দাঙ্গা নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বোঝা গিয়েছিল মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গ আসবেই। হলও তাই। সেলিম জানান, “আমি মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে গিয়েছিলাম, সুতিতে গিয়েছিলাম। কোথাও পুলিশের গুলিতে কোথাও হামলাকারীদের আক্রমণে মানুষ মারা গিয়েছেন।” সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকাতে উপায় বাতলে বক্তা বলেন, “হিংসা দেখলে ডান্ডাগুলোকে মোটা করতে হবে। দেশ বাঁচাতে হলে আবার লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে।”