জন্ম মুসলিম পরিবারে। তবে শৈশব থেকেই তাঁর ধ্যানজ্ঞান প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের সংরক্ষণ। শুরুতে দুই সম্প্রদায়ের মাথাদের বিষ নজরে পড়তে হয়েছিল। সে সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মেদিনীপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কংসাবতীর পারে পাথরায় তাঁর হাত ধরেই ‘প্রাণ’ পেয়েছিল হিন্দুদের ভেঙে পড়া প্রায় ৪২টি প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য (মাকরা পাথরে তৈরি, টেরাকোটার কারুকাজ)। সেই সূত্রেই গড়ে উঠেছে ‘মন্দিরময় পাথরা’ ।
সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ার জন্য ১৯৯৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা ‘কবীর সম্মান’-এ বরণ করেছিলেন তাঁকে। সেই সম্মান ফেরাতে চলেছেন ইয়াসিন পাঠান ।
আরও পড়ুন: কলেজ ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা; বিপাকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ
সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্ট করে রাষ্ট্রপতি সম্মান ফেরানোর কথা জানিয়ে ইয়াসিন লিখেছেন, “বাহান্ন বছর ধরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৪২টি প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য রক্ষা করে বড়ই ভুল করে ফেলেছি। ক্ষমা করো, দয়াময় ঈশ্বর-আল্লাহ!”
পাথরার পাশেই হাতিহল্কা গ্রাম। এখানেই বেড়ে ওঠা ইয়াসিনের। সম্প্রতি রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ এবং হতাশ ৭২ বছরের ইয়াসিন। বৃহস্পতিবার সকালে টেলিফোনে বঙ্গবার্তাকে বললেন, “সেই ছোট থেকে হিন্দুদের মন্দির সংরক্ষণে হাত লাগিয়েছিলাম। ভাবিনি, এই দিনটা দেখতে হবে!”
বললেন, “রাজনীতির জন্যই ধ্বংস হচ্ছে দেশের সম্প্রীতি ও ঐক্য। এরকম চলতে থাকলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ কীভাবে বাঁচবে কে জানে!”
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে রাজ্যে আসছেন মোদী, ওয়াকফ-উত্তেজনার মাঝেই করতে পারেন সভা
সম্প্রতি হিংসার ঘটনার কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মাধ্যমে। তা দেখে আতঙ্কে শিউড়ে উঠেছেন একদা অকুতোভয় ইয়াসিনও। বললেন, “আগামী ৩ মে আমার জীবনী নিয়ে নাটক হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার অশোকনগরে। উদ্যোক্তারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু সাহস হচ্ছে না ওখানে যাওয়ার!”
অথচ হিন্দুদের মন্দির সংস্কারের জন্য একসময় মেদিনীপুর থেকে রাইটার্স হয়ে দিল্লি পর্যন্ত বারে বারে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর জেদের কাছে হার মেনে যোজনা কমিশনের তত্কালীন ডেপুটি চেয়ারপার্সন প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন পাথরার মন্দির সংস্কারে। ’৯৮-এ কাজ শুরু করে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)। তার পাঁচ বছর পর পাথরার ৩৪ টি মন্দির-সৌধ অধিগ্রহণ করে এএসআই। সেই সূত্রে পর্যটন কেন্দ্রের তালিকাতেও যুক্ত হয়েছে মন্দিরময় পাথরার নাম।
কাজ অবশ্য এখনও অনেক বাকি। ইয়াসিনের কথায়, “এখন আর শরীর সঙ্গ দেয় না। হার্ট ব্লক, কিডনিতে সমস্যা। সামান্য পেনশন পাই, তার মধ্যে চার হাজার টাকা চলে যায় ওষুধ কিনতে। তারমধ্যে এভাবে ভাইয়ে ভাইয়ে ভেদাভেদ, সংঘর্ষ দেখলে খুব কষ্ট লাগে। তাই ঠিক করেছি রাষ্ট্রপতির দেওয়া কবীর সম্মান ফিরিয়ে দেব।”