ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ধনঞ্জয় ‘প্রকৃত দোষী’ ছিলেন, না কি তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল, তা নিয়ে অতীতেও বিতর্ক হয়েছে। সম্প্রতি ফাঁসির মামলা পুনর্বিচারের দাবি ঘিরে তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্যের আইন দফতরে। ফাঁসির দু’দশক পরে ওই মামলা কী ভাবে ‘রিওপেন’ করা যায়, তার আইনগত দিক খতিয়ে দেখছে সরকারি মহল। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন মামলা এর আগে হয়েছে কি না এবং কোন আইনি যুক্তিতে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ডের পরেও মামলাটির নতুন করে শুনানি হয়েছিল, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া চলছে। এই আবহে আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় দোষীর মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত।
এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সেখানে সরাসরি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তোলেন তাঁরা। নতুন করে তদন্তের আর্জিও জানান। শুনানির শেষ দিনে নির্যাতিতার বাবার সন্দেহ ছিল, ওই ঘটনায় চার জুনিয়র ডাক্তারের হাত থাকতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওই দিন (৮ অগস্ট) রাতে যাঁরা আমার মেয়ের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের আমরা প্রচণ্ড ভাবে সাসপেক্ট (সন্দেহ) করছি। ডিএনএ রিপোর্ট তো পাওয়া গিয়েছে। তথ্যপ্রমাণ দেখেছেন। কোনও মহিলার উপস্থিতি ছিল সেখানে।’’ এমনকি, সিবিআইকে তিনি ‘বিরোধী’ বলেও মন্তব্য করেন। রায় ঘোষণার আগে নির্যাতিতার বাবা নিশানা করেন মমতাকে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, রাত ২টো পর্যন্ত জেগে মনিটর করেছিলেন। ওঁর কী ইন্টারেস্ট ছিল জানতে চাই। তথ্যপ্রমাণ যে লোপাট হয়েছে, সেটা সিবিআই বলেছে। শুধু সিভিক নয়, সব দোষী সামনে আসবে।’’
আর পড়ুন: ‘ওরা গুলি করলে আমরাও চারগুণ বেশি গুলি করব।’ তাতেই যেন নতুন করে অক্সিজেন পায় জেলার পুলিশ
আরজি কর-কাণ্ডের দোষীর ফাঁসির পক্ষেই সওয়াল করেছে রাজ্য। সিবিআইও সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করে আদালতে।
আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত ১১ নভেম্বর। ঘটনার ৫৯ দিনের মাথায় বিচারপর্ব শুরু হয়েছিল। গত ৯ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন জানিয়েছিল শিয়ালদহ আদালত। সে দিন সিবিআইয়ের আইনজীবী, নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যেরা এবং তাঁদের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে একমাত্র ‘অভিযুক্ত’ হিসাবে উল্লেখ করে সিবিআই। আদালতে তাঁর ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’র আবেদন করেন ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী।
আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়ের নাম করেছিল সিবিআই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে।
আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুন মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ১১ নভেম্বর। বিচারপর্ব শুরু হয় ঘটনার ৫৯ দিনের মাথায়। ঘটনার ১৬২ দিনের মাথায় রায় ঘোষণা করল আদালত।
দোষী সাব্যস্ত হলেন আরজি কর মামলার ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। রায় ঘোষণা হবে আগামী সোমবার।
আরও পড়ুন: North Dinajpur Encounter: এপিডিআরের দাবি মমতার হস্তক্ষেপের, সাজ্জাকের মৃত্যু ভুয়ো এনকাউন্টারে
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। শনিবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ওই রায় ঘোষণা করেন। আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়ের নাম করেছিল সিবিআই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয়কে।
রায় শুনে চোখে জল নির্যাতিতার বাবার। তিনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার উপর যে আস্থা ছিল, তার পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছেন।’’ বিচারক দাস প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘‘সোমবার আসুন।’’
বিচারক দাস সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় ঘোষের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সিবিআই এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে যা মনে হয়েছে তাতে দোষী সাব্যস্ত করব আপনাকে। আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।’’ সেটা শুনে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমি কিছু করিনি। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। আমার কথাটা এক বার শুনুন।’’ বিচারক রায় ঘোষণা করে বলে দেন, ‘‘সোমবার আপনার কথা শুনব।’’