কেউ প্রাক্তন মন্ত্রীর কন্যা, কেউ আবার নিজে খোদ কাউন্সিলর, কেউ বা জেলে যাওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ। এনারা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কারওর বাড়ি শহরে তো কেউ থাকেন দূর গ্রামে। কিন্তু আজ এনারা প্রত্যেকেই এক ছাতার তলায়। এসএসসির প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এনারা ‘অযোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা। যাদের রাজনৈতিক পরিচয় আবার তৃণমূল। সমাপতন নাকি সমানুপাতিক, তা বৃহত্তর রাজনীতির অংশ।
আরও পড়ুনঃ ১৮০৪ জনের দাগি তালিকা প্রকাশ শেষ পর্যন্ত, তালিকায় অনেক তৃণমূল নেতা ও ঘনিষ্ঠদের নাম!
শনিবার মোট ১ হাজার ৮০৪ জন ‘দাগি’ শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেছে এসএসসি। এনারা প্রত্যেকেই চিহ্নিত অযোগ্য। চাকরি পেয়েছেন ঘুরপথে। একাংশের মতে, এই তালিকায় শাসক শিবিরই ‘হেভিওয়েট’। কিন্তু সেই কাটাছেঁড়া করা এখনও অনেকটা বাকি। কারণ, তালিকা বড় অস্পষ্ট। এসএসসি নাম, রোল নম্বর প্রকাশ করলেও, সেই ‘দাগি’দের ঠিকানা কিংবা তারা কোন স্কুলে পড়াতেন, সেই তথ্য প্রদান করেনি। সুতরাং, নাম বিভ্রাট হওয়ার সম্ভবনা এখনও অনেকটাই।
আরও পড়ুনঃ মাথায় হাত নাগরাকাটার বামনডাঙা চা বাগানের শ্রমিকদের, সকালে কাজে এসে দেখলেন…!
এই পরিস্থিতিতে একেবারে বাছাই করে যে নামগুলো তুলে আনা গেল সেগুলি হল –
পরেশ কন্যা আঙ্কিতা
অঙ্কিতা অধিকারী, তাকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তিনি এই তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই নিয়োগ মামলায় জর্জরিত। যাকে ঘিরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা একের পর এক খোলস ছাড়িয়েছে, শনিবার এসএসসি-র প্রকাশিত তালিকায় সেই অঙ্কিতার নামই যেন সবচেয়ে বেশি ‘প্রজ্জ্বলিত’।
বিভাস মালিক
হুগলির খানাকুলের দাপুটে তৃণমূল নেতা। জেলা পরিষদের সদস্য। ‘অযোগ্য়ের’ তালিকাই সেই বিভাসই রয়েছেন ৩১৬ নম্বরে। চাকরি যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন তারকেশ্বরের একটি বিদ্যালয়ে। অবশ্য বিভাসের কীর্তি যে খুব সীমিত, তা নয়। তিনি নিজে যেমন চাকরি নিয়েছেন, তেমনই পাইয়েওছেন।
বিভাসের স্ত্রী সন্তোষি মালিকও ছিলেন ‘দাগি’ শিক্ষিকা। এসএসসি-র তালিকায় বিভাসকে দেখা গেল সস্ত্রীক।
প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল
রোল নম্বর ৩২২১১৬৭৫০০৩৫৭৭। তালিকায় রয়েছেন ১ হাজার ৬৯ নম্বরে। তিনি হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল সভানেত্রীর মেয়ে। মায়ের সুবাদেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শিক্ষা মহলে।
নমিতা আদক
এই তালিকাতেই সিরিয়াল নম্বর অনুসারে ৯১৫-তে নাম রয়েছে খানাকুলের আরও এক দাপুটে তৃণমূল নেতা নইমুল হকের স্ত্রী নমিতা আদকের। রোল নম্বর ৯১৫১২২১১৬৮৬০০১৪৬৭।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নইমুল হক খানাকুলের এক পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। পরে সমিতির সহ-সভাপতি ও পূর্ত কমার্ধ্যক্ষের দায়িত্বও সামলেছেন।
সাহিনা সুলতানা
ইনি আবার সকলের থেকে এক ধাপ এগিয়ে। বর্তমানে হুগলির জেলা পরিষদের সদস্যা সাহিনার নাম এই তালিকায় রয়েছে ১ হাজার ২৪১ নম্বরে। তিন বারের জেলা পরিষদের সদস্যা, পার্থ ঘনিষ্ঠ। সব মিলিয়ে সাহিনা যতটা না ‘দাগি’ শিক্ষিকা, তার চেয়েও বেশি রাজনীতিক।
কবিতা বর্মণ
কবিতা এই তালিকার ব্যতিক্রমী। কারণ, তিনি তৃণমূল ‘ভুলো’ মানুষ। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন তিনি। স্বামী প্রফুল্ল বর্মণ উত্তর দিনাজপুরের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ এবং হেমতাবাদের তৃণমূল ব্লক সভাপতি ছিলেন। সেই সময়েই চাকরি। পরবর্তীতে বিজেপিতে লাফ।
অজয় মাঝি
রোল নম্বর ৪২২১১৬৭৫০০৭৫৬৭। তবে ‘দাগি’ শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতিও।
কুহেলি ঘোষ
গ্রাম দিয়ে শহর এই একটা ক্ষেত্রেই হয়তো ঘেরাও করা গিয়েছে। বঙ্গবার্তার আপাতত কাটাছেঁড়ায় একমাত্র শহুরে মুখ কুহেলি ঘোষ। তিনি জেদী। তালিকায় তার নাম প্রকাশ হতেই দিয়েছেন মামলার হুঁশিয়ারি। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। তিনি যে কাউন্সিলর। এসএসসির ‘অযোগ্যের’ তালিকায় ওঠা কুহেলি ঘোষ রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর।


                                    
