সাহেব দাস, তারকেশ্বর:
হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র তীর্থক্ষেত্র তারকেশ্বর মন্দির। সারা বছরই ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে হুগলির শৈবতীর্থে। বিশেষ করে শ্রাবণ ও চৈত্র মাসে বাবার মাথায় জল ঢালার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় তারকেশ্বরে।
তাঁদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তারকেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে বজ্র আঁটুনি আরও বাড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তারকেশ্বর মন্দির চত্বরে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে বসানো হবে উন্নতমানের অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র।
আরও পড়ুন: “আপনিই সেই BSF জওয়ান না?” পূর্ণমকে দেখেই চিনে গেল তারকেশ্বরের পুরোহিত
আগুন নেভানোর সুবিধার্থে তৈরি করা হবে হাইড্র্যান্ট। সেই সঙ্গে বানানো হবে পাম্প হাউস। নজরদারি বাড়াতে তারকেশ্বর মন্দির এবং তার আশপাশের এলাকাকে অত্যাধুনিক মানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে। মন্দির চত্বরে প্রতিনিয়ত কী ঘটছে, তার ছবি ক্যামেরাবন্দি করা হবে।
যে কোনও জায়গায় বসে মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারে সেই ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। মন্দির চত্বরে অগ্নি–নির্বাপক যন্ত্র বসানো, হাইড্র্যান্ট এবং পাম্প হাউস বানাতে আনুমানিক এক কোটি টাকা খরচ হবে। সিসি ক্যামেরা বসাতেও প্রায় ৮০–৯০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তার যাবতীয় খরচ বহন করবে তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ।
সংস্থার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায় জানিয়েছেন, এই দু’টি কাজের জন্য ইতিমধ্যেই সরকারি অনুমোদন মিলেছে। কাজ শুরু করার জন্য টেন্ডার ডাকার কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গোটা মন্দির চত্বর এবং মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য প্রধান সড়কে যতগুলি গেট আছে, সেখানে অগ্নি–নির্বাপক যন্ত্র বসানো হবে। মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে সিসি ক্যামে আসন্ন শ্রাবণী মেলার আগেই এই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন তারকেশ্বর মন্দিরে সে অর্থে কোনও আধুনিক মানের অগ্নি–নির্বাপক ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। ফলে মন্দির চত্বরে হঠাৎ করে আগুন লাগলে বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সরকারি কর্তারা।
সেজন্যই অগ্নি–নির্বাপক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগুন নেভানোর জন্য জলের জোগান ঠিক রাখতে হাইড্র্যান্ট তৈরি করা হবে। তাতে দমকল কর্মীদের কাজ করতে সুবিধা হবে। ভবিষ্যতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরকেও আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মন্দির চত্বরে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়লে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেও কাজে লাগবে। পুলিশের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘এখন অনেক উন্নত ধরনের সিসি ক্যামেরা বেরিয়েছে। তা দিয়ে ভিড়ের মধ্যে কোনও একটা নির্দিষ্ট লোককে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। পহেলগামের ঘটনার পরে তারকেশ্বর মন্দিরের মতো জনবহুল স্থানে নজরদারি আরও কঠোর করা দরকার। সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়লে নজরদারি করতে সুবিধা হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুকদেব ঘোষ বলেন, ‘তারকেশ্বর মন্দিরে দেশ–বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন। মন্দিরের আশপাশে অনেক দোকান ও হোটেল রয়েছে। বহু খাবার হোটেল চলছে। এতদিন এখানে আগুন নেভানোর মতো কোনও আধুনিক পরিকাঠামো ছিল না। সেটা হলে আমাদের সবারই লাভ হবে। বিপদ তো বলে আসে না। এর জন্য তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন: যখন-তখন ঝেঁপে নামবে বৃষ্টি! ছাতা ছাড়া বাড়ি থেকে একদম বেরবেন না! জারি লাল সতর্কতা
মন্দিরের পুরোহিত শঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ যে কাজটা করছে, তাতে আমরা খুশি। যাতে সব দিক বজায় রেখেই সুষ্ঠু ভাবে কাজ হয়, সেটা প্রশাসনকে দেখতে বলব। আমরাও চাই, মন্দিরের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হোক। তবে ভক্তরা এসে যেন অসন্তুষ্ট না হয়, সেটাও দেখা উচিত।’