“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে অনিল সব কথা মনে করে কাঁদতে থাকে, তাই দেখে শিউলী বলে, “তুমি কাঁদছো? ছিঃ, কাঁদতে নেই। চলো এবার আমরা ঘরে ফিরে যায়।”
শিউলীর হাত ধরে অনিল ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
ঘরের চৌকাঠ পা দিতেই অনিল থমকে দাঁড়ায়। অতীত দিনের পুরানো সমস্ত স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে গভীর রাতে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়টাও। ঘরে ঢুকে সোজা মায়ের বিছানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অনিল “মা” বলে ডাকে। “মা” ডাক শুনে কৃষ্ণাদেবীর মন আনন্দে নেচে উঠে। বলে, “অনিল, তুই এসেছিস। আই বাবা আই আমার কাছে আই। কতদিন তোকে দেখিনি। ” এই বলে ছেলের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই দেখে অনিল শয্যাশায়ী মায়ের দু’হাত ধরে বলে, “মা, আমি এসেছি। আর আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোথাও না।”
“জানি বাবা জানি। তুই আমার বুকে আই। ” এই বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। মা – ছেলে দুজনে কাঁদতে থাকে। একসময় কান্না থামলে কৃষ্ণাদেবী বলে, “জানিস, তোর বাবা তোকে খোঁজার জন্য দিনরাত লোক পাঠিয়ে নিজে গিয়ে তোর খোঁজ পায়নি। শেষে চিন্তায় চিন্তায় মানুষটাই আর …..” কথাটা শেষ না করে কৃষ্ণাদেবী আবার কাঁদতে থাকে। দেওয়ালে টাঙানো প্রতাপ চক্রবর্তীর মালা দেওয়া ফোটোর দিকে সবাই তাকায়। সত্যিই, লোকটা দেবতা ছিল। গ্রামের মানুষেরা তাই তো আজও পূজা করে।
“তুই এতদিন মাকে কোথায় ছিলি বাবা?”
“মা, আমার বট্ট ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও। ” এই বলে আবার মাকে জড়িয়ে ধরে অনিল কাঁদতে থাকে।
“না বাবা না সবই কপালের দোষ। এখন কেঁদে কোন লাভ হবে না। যা হবার তা তো হবেই। যা, বৌমাকে নিয়ে যা। হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে যা।”
এতকিছু ঘটনা ঘটার পরও সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ একটুকুও কমেনি দেখে শিউলীও কেঁদে উঠে।