সৌরভ দত্ত :
ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগল। বয়স হয়েছিল ৯০। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। শ্যাাম বেনেগলের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন তাঁর কন্যা পিয়া বেনেগল।
গত ১৪ ডিসেম্বরেই ৯০ বছর বয়সে পা দেন ভারতীয় চলচ্চিত্রর কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগল।
নব্বইতম জন্মদিনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ছিলেন পরিচালক। সেই সেলিব্রেশনে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা কুলভূষণ খারবন্দা, নাসিরুদ্দিন শাহ, দিব্যা দত্ত, শাবানা আজমি, রজিত কাপুর, অতুল তিওয়ারি, শশী কাপুরের পুত্র কুণালের মতো তারকারা। সেই সেলিব্রেশনেও খুশির মেজাজে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। গোটা সন্ধ্যা সিনে আড্ডায় মেতেছিলেন পরিচালক শ্যাম। আর আজ অনুরাগীদের কাঁদিয়ে পরলোকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রিয় পরিচালক।
এক বিজ্ঞাপনী সংস্থার মাধ্যমে কাজের জগতে প্রবেশ করেন তিনি । ১৯৫৯ সালে সেখানে যোগ দেন। এরই ১৯৬২ সালে বানান তাঁর প্রথম তথ্যচিত্র। সেই ছবির নাম ঘের ব্যায়টা গঙ্গা। ১৯৩৪ সালে তিনি ১৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। হায়দরাবাদের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। বিনোদনের জগতে হয়ে ওঠেন অপর শো ম্যান । মন্থন, মুজিব, মান্ডি, কলিযুগ, ত্রিকাল, ইত্যাদির মতো ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতকে তিনি উপহার দিয়েছেন একের পর এক সিনেমা। ‘মন্থন’, ‘অঙ্কুর’, ‘ভূমিকা’, ‘জুনুন’, ‘মান্ডি’, ‘নিশান্ত’ ভারতীয় সিনেমার মাইলফলক। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালে মুক্তি প্রাপ্ত জুবেদা ছবিটি বক্স অফিসের সঙ্গে সঙ্গে সমালোচকদের মন জয় করেছিল। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন করিনা কাপুর, মনোজ বাজপেয়ী এবং রেখা। ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন শ্যাম বেনেগল। ১৯৯১ সালে তাঁকে দেওয়া হয় পদ্ম ভূষণও।
৯০ বছর বয়সে পা দিলেও তিনি নিজের কাজ নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকতেন। গত বছরই ‘মুজিব: দ্যা মেকিং অফ নেশন’ নামক একটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি যে সিনেমায় ভারত এবং বাংলাদেশের একাধিক নামিদামি অভিনেতারা অভিনয় করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের অভিনেতা আরিফিন শুভকে। শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নুসরত ফারিয়া। ‘মুজিব’ ছবির মুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্কের ঝড় বয়েছিল।
৯০ বছর বয়স হলেও, শ্যাম বেনেগল কাজের মধ্যেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন। বয়সগত কিছু শারীরিক সমস্যাকে ছাপিয়েই সিনেমা তৈরির কাজে মন দিয়েছিলেন। নব্বইতম জন্মদিনে সিনেমার প্রতি তাঁর অধ্য়াবসায় নিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই বৃদ্ধ হই। এটা মহৎ কিছু নয়। জন্মদিন একটা বিশেষ দিন হতে পারে কিন্তু আমি এটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করি না। প্রতিবছরের মতো এই বছরেও আমি আমার অফিসে কেক কেটেছি সকলের সঙ্গে।’
জানা গিয়েছে, সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করার জন্য হাসপাতালে যেতে হত পরিচালককে। একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেভাবে নিজের জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন তা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। বছরের শেষ সপ্তাহে শ্যাম বেনেগলের মতো পরিচালকের চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সিনেপ্রেমীরা। শ্যাম বেনেগলের মৃত্যু এক যুগের অবসান।
আরও পড়ুন: West Bengal Education: পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে এবার ছাঁকনির ব্যবস্থা
কিছুদিন আগেই ৯০ তম জন্মদিন পালন করেছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শ্যাম বেনেগাল। অঙ্কুর, নিশান্ত সহ একাধিক হিট উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে এদিন শোক প্রকাশ করলেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে অর্থাৎ যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল সেখানে লেখেন, ‘ শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুর খবর পেয়ে গভীরভাবে শোকাহত। ওঁর গল্প বলার ধরন ভারতীয় সিনেমায় গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল। মানুষের মনে আজীবন থেকে যাবে ওঁর কাজ।’
একই সঙ্গে এদিন নরেন্দ্র মোদী পরিচালকের পরিবারের উদ্দেশ্যেও দেন বিশেষ বার্তা। লেখেন, ‘পরিবার এবং ওঁর অনুরাগীদের সমবেদনা। ওম শান্তি।’
শ্যাম বেনেগলের প্রয়াণে এক্স প্রোফাইলে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগলের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। সমান্তরাল ছবির স্তম্ভ ছিলেন তিনি। তাঁর সতীর্থ ও সিনেপ্রেমীদের কাছে প্রচুর ভালোবালা পেয়েছেন তিনি। পরিচালকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’
এক্স প্রোফাইলে শোকপ্রকাশ করেছেন শশী থারুর। শোকপ্রকাশ করেছেন পরিচালক শেখর কাপুর।
শ্যাম বেনেগলের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারও। তিনি লেখেন, ‘অত্যন্ত ব্যথিত শ্যাম বেনেগলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে। আমাদের দেশের অন্যতম দক্ষ পরিচালক ছিলেন। উনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের লেজেন্ড। ওম শান্তি।