Tuesday, 17 June, 2025
17 June, 2025
HomeকলকাতাPratul Mukhopadhyay demise: ‘আমি বাংলায় গান গাই’ থামল, অচেনা সাগরে ডিঙ্গা...

Pratul Mukhopadhyay demise: ‘আমি বাংলায় গান গাই’ থামল, অচেনা সাগরে ডিঙ্গা ভাসালেন প্রতুল

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

এক ভদ্রলোক গাইছেন। কেবল ঠোঁট বা কণ্ঠ নয়, তাঁর গোটা শরীর যেন ভেসে যাচ্ছে গানের আলোয়। অল্প বয়সে টিভির পর্দায় দেখেছিলাম এমনই এক গায়ককে। কোনও ধারণা ছিল না যিনি গাইছেন তিনি কে। তবে তাঁর গাওয়া গান এক অলৌকিক বিভা ছড়িয়ে মিশে যাচ্ছিল নিছকই টিভির দিকে তাকিয়ে থাকা শ্রোতার শরীরে। সেই গানে যন্ত্রের অনুষঙ্গ নেই। তবু কোথাও কিছু কম পড়ছিল না। ‘আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’… গাইছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ৮২ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণ সংবাদ সেই বহুদিন আগের স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে। এই আশ্চর্য সময়ে, যখন বাংলা ভাষাকে ক্রমে হারিয়ে ফেলার বেদনাবিধুরতাটুকুও যেন স্পর্শ করছে না আমাদের… সেই অসাড় সময়কালে প্রতুলের প্রয়াণ যেন এক প্রতীকী বিচ্ছেদ রচনা করছে।

আরও পড়ুন: Coochbehar News: কোচবিহারে মেডিক্য়ালের এক ইন্টার্নের অস্বাভাবিক মৃত্যু, দেহ পড়ে থাকল মর্গের বাইরে প্রায় ১১ ঘণ্টা

গত শতকের নয়ের দশকে সুমন চট্টোপাধ্যায় গাইলেন ‘তোমাকে চাই’। উথালপাতাল হয়ে গেল বাংলার শ্রোতৃসমাজ। এর প্রায় একদশক আগেই কিন্তু এসে গিয়েছেন প্রতুল। সেই অর্থে কোনও প্রশিক্ষণ নেই। তুলনায় কিছুটা সরু, রিনরিনে কণ্ঠস্বর। গানের সময় সঙ্গে থাকে না কোনও যন্ত্র। কেবলই গলার মডিউলেশনকে ব্যবহার করে আশ্চর্য ‘এফেক্ট’ তৈরি করে নিতেন। প্রয়োজনে তুড়ি দিতেন। ধীরে ধীরে ওই নয়ের দশকের সময়কাল তাঁকেও পৌঁছে দিল শ্রোতার কাছে, ক্যাসেটবন্দি করে। তিনিও হয়ে উঠলেন ‘অন্যরকম’ বাংলা গানের এক অন্যতম স্বর। বহু কিছু থেকেই তিনি গানের রশদ সংগ্রহ করেছেন। মন দিয়ে শুনেছেন গান। খুব অল্প বয়স থেকেই বুঝেছিলেন, কণ্ঠে রয়েছে সুরের জলছাপ। তবু প্রথম প্রথম নিজে গান লেখার চেষ্টা করেননি। কবিতা-ছড়ায় সুর বসিয়ে গেয়েছেন। কবিতার ধ্বনিমগ্নতা তাঁকে স্পর্শ করেছিল তখনই। ধীরে ধীরে গান লেখাও শুরু হয়। সারা জীবন গান তাঁকে ঘিরে রেখেছে। পেশার তাগিদে কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তবু গানকে সঙ্গে করেই এগিয়ে গিয়েছে জীবন।

‘আনমনে গান মনে’ নামের একটি রচনায় প্রতুল লিখেছিলেন, ‘একটা গান ‘হয়ে উঠেছে’ কিনা সেটা অনুভব করা যায়।’ এই অনুভবের জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। ওই একই রচনায় পাই ‘… মাউন্ট আবুর দিলওয়ারা মন্দিরের মর্মরভাস্কর্য দেখলে বোঝা যায় শিক্ষা ও সাধনা কোন স্তরে গেলে এমন সৃষ্টি সম্ভব। এখানে বাইরের আড়ম্বর একেবারেই নেই। কিন্তু দেখলে চোখ ফেরানো দুঃসাধ্য।’ এভাবেই নিজের মনের ভিতরে ‘বাইরের আড়ম্বর’কে সরিয়ে রেখে গানকে স্পর্শ করেছেন প্রতুল। বিশ্বাস রেখেছেন পরিবেশনে। ‘পরিবেশন বা প্রেজেন্টেশন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। এটার অভাবে বা দোষে অনেক মহান শিল্পসৃষ্টি মানুষের কাছে গ্রহণীয় হতে চায় না।’ প্রতুলের গানে এই পরিবেশন কোন স্তরে পৌঁছত, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইউটিউব দেখে জানতে পারবে। গোটা শরীর দিয়ে গানটিকে গড়ে তুলতেন তিনি। যেন কোনও স্থাপত্য। তিলে তিলে তা তৈরি হত কণ্ঠ ও শরীরী ভাষার সমন্বয়ে।

আরও পড়ুন: Bankura Sonamukhi: বর্গী হামলা থেকে সোনামুখীকে বাঁচান মা-কালী

বাংলা ভাষায় গণসঙ্গীতের অন্যতম সেরা কণ্ঠ তিনি। ‘চ্যাপলিন’-এর মতো গান শ্রোতার হৃদয়ে তাঁকে চিরকালীন করে রেখেছে। আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ম্যাগনাম ওপাস বাছতে বললে বোধহয় বিতর্কও হবে না, যদি এক নম্বরে ‘আমি বাংলায় গান গাই’কে রাখা যায়। কিছু মানুষ থাকে, যাঁদের সৃষ্টি তাঁদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে তাঁদের অনন্তের বাসিন্দা করে তোলেন জীবদ্দশাতেই। প্রতুল তেমনই একজন। এমন বহু শ্রোতা আছেন, যাঁরা হয়তো প্রতুলের অন্য কোনও গান শোনেননি এবং তাঁর নামও জানেন না। কিন্তু তাঁরাও শুনেছেন ‘আমি বাংলার গান গাই/ আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’। স্পষ্টতই এই গানের আবেদন এমনই তীব্র, যে তার আবেদন যেন বাংলার মাঠ-ঘাট, জ্যোৎস্নামাখা আকাশ পেরিয়ে আরও বহু দূরে অথচ হৃদয়ের গহীনে বাসা বাঁধে। এক অলৌকিক বিভা হাজার বছরের বঙ্গজীবনকে ধরে রাখতে পেরেছে এই গানের নানা পঙক্তির মধ্যে। গানটির কথা ও সুর… সামগ্রিক আকুতি- সবই আসলে বাংলার আকাশ-বাতাসে মিশে গিয়েছে। নশ্বর শিল্পীর প্রস্থানে সেই অবিনশ্বরতার কোনও ক্ষয়বৃদ্ধি নেই। তা চিরকালীনতার অন্দরে নিজেকে সঁপে দিয়েছে সেই কবে।

যতদিন বাংলা ভাষাকে ভোরের রোদ বা মধ্যরাতের হিম জ্যোৎস্না স্পর্শ করবে, মহীনের ঘোড়াগুলি ঘাস খাবে আনমনে, এই গানও সশরীরে ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। কবি আবীর সিংহর সেই বিখ্যাত লাইনটি মনে পড়ে যায়। ‘যতদূর জ্যোৎস্না পড়েছে সবাই সবার আত্মীয়।’ অতুলের এই গানও যতদূর ছড়িয়ে যাবে সকলে সকলের আত্মীয় হয়ে উঠবে বাংলা ভাষাকে ছুঁয়ে। চিরকাল।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন