বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম অনেকটা সস্তা হওয়ায় দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমার আশা করছেন সকলে। দাবি উঠছে, অবিলম্বে তেল সংস্থাগুলির আমদানি খরচ কমার সুবিধা সর্বসাধারণের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হোক। তবে ওই আশা বা দাবিতে কার্যত জল ঢেলে হঠাৎ করেই রাজ্যে খানিকটা বেড়ে গেল পেট্রল-ডিজ়েলের দাম। সোমবার সকাল থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র পেট্রল লিটারে বেড়েছে ৪০ পয়সা। ডিজ়েল চড়েছে ২০ পয়সা। ফলে কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ১০৫.৪১ টাকা, ডিজেলের ৯২.০২ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, কেন্দ্র সাধারণ মানুষের ঘরে সুবিধা পৌঁছে না দিয়ে রাজকোষ ভরছে উৎপাদন শুল্ক ২ টাকা করে বাড়িয়ে। তার উপর রাজ্যে আচমকা এই দাম বৃদ্ধি। কী কারণে এই পদক্ষেপ, তা স্পষ্ট নয়। তবে এ বার কেন্দ্র যদি দাম কমায়, সে ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন বাংলার মানুষ। সূত্রের খবর, দেশের অন্য কোনও রাজ্যে তেলের দাম বাড়েনি। পূর্ব ভারতে বিহারের পটনায় ডিজ়েল ৬০ পয়সা কমেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েলের সূত্র জানাচ্ছে, দুই জ্বালানিরই মূল দাম বা বেসিক প্রাইস পরিবর্তন হয়েছে। অঙ্ক মেনে বেড়েছে খুচরো বাজারের দাম।
আরও পড়ুন: বাড়েনি বেতন, অসন্তোষ নিগমে, অনিশ্চয়তায় কনডাক্টররা
অন্য একটি অংশের দাবি, রাজ্যে পরিবহণ খরচের কিছু বদল দাম বৃদ্ধির আসল কারণ। মূল দামের মধ্যেই এই খরচ ধরা থাকে। তবে সব পক্ষেরই আশ্বাস, এই দাম দৈনিক বদলাবে না। তবে প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহণ জ্বালানির পিছনে সাধারণ মানুষের খরচ যখন কমা উচিত, তখন কখনও সরকার, কখনও তেল সংস্থার প্রয়োজন, কখনও বা অন্য কোনও সমীকরণের যুক্তিতে দাম বাড়ানো হচ্ছে কেন? বাকি রাজ্যের সঙ্গে কেনই বা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে বাংলার মানুষের?
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ সেন বলেন, “আমাদের কাছেও এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে কোনও খবর ছিল না। রবিবার মধ্যরাতে আচমকা নির্দেশ এসেছে। সোমবার সকাল থেকে নতুন দামে তেল বিক্রি করছি।” তিনিও জানান, মূল দাম বেড়েছে বলেই খুচরো দাম বেড়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনও করের পরিবর্তন হয়নি।
আরও পড়ুন: দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও ফিরেছিলেন দলে, সিপিএম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত
অপর একটি সংগঠন ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের রাজ্যের সভাপতি জন মুখোপাধ্যায় জানান, সম্ভবত পরিবহণ খাতে কিছু বদল ঘটেছে। সোদপুরে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের এক পাম্পের মালিকও পরিবহণ সংক্রান্ত কারণের কথাই জানান।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই। কোথায় কী ভাবে কেন খরচ বেড়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। গোটা বিষয়টা ধিরেই রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে গ্রাহকদের খরচ বেশি হবে নিশ্চিত। গত ১ ডিসেম্বরও ঠিক এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গে পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম লিটারে ৬ পয়সা করে বেড়েছিল। মূলত বিভিন্ন পাম্পে বিভিন্ন দাম— এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সেটা করা হয়েছিল বলে সেই সময় দাবি করেছিলেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ।