লালমাটির জেলা ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতেই দেখা মিলবে এই রঙিন পাহাড়ের। বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত এলাকা ওদলচুয়ায় রয়েছে সেই আশ্চর্য সুন্দর রঙিন পাহাড়। স্থানীয়রা একে খাদান ডুংরি বলে থাকেন। এটা যে পর্যটন স্থল হতে পারে সেটা বুঝতেই পারেননি গ্রামবাসীরা। শীতে এখন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তাঁদের নিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে গিয়েই এই রঙিন পাহাড়ের হদিশ পান গ্রামবাসীরা। বেশ গা ছমছমে অরণ্যের মধ্য দিয়ে গিয়ে তবে পৌঁছনো যায় এই বিরল দৃশ্যের স্থানে।
আরও পড়ুন: প্রশাসনের জেদ বনাম খনি বিরোধিতার তেজ
দেখে মনে হবে কেউ রং তুলি দিয়ে যেন রাঙিয়ে দিয়েছে পাহাড়ের প্রতিটা পাথর। সূর্যের আলোচ ঝকমক করছে লাল, গলুদ, সাদা রঙের পাথর। অস্ট্রেলিয়ায় উলুরু পাহাড়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভারতে এই বেলপাহাড়ি ছাড়া আর কোথাও এর অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। সূর্যের আলোর জন্য রং পরিবর্তন হয় না। পাথর গুলিই এখানে রঙিন। অর্থাৎ একেবারে রঙিন পাথর দিয়েই তৈরি হয়েছে এই পাহাড়।
এই ওদলচুয়ার গ্রামেরই বাসিন্দা রাজেশ মাহাতো। এক মেডিকেল পরীক্ষার্থী, যিনি খুঁজে বের করেছেন এই আশ্চর্য রঙিন পাহাড়, তিনিই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রঙিন পাহাড়ের ছবি শেয়ার করে সকলকে চিনিয়ে দিয়েছেন বাংলার বুকে লুকিয়ে থাকা এই অদ্ভুত এলাকা। জানা যায়, সুদূর অস্ট্রেলিয়ার পাহাড়ের সঙ্গে এই অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে বেলপাহাড়ির ‘খাদান ডুংরি’-র বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। তাই বলাই বাহুল্য, আগামীদিনে এই ‘খাদান ডুংরি’ পর্যটকদের কাছে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
বেলপাহাড়ির রাজেশ মহাতো জানিয়েছেন, একেবারে রঙিন পাথর দিয়েই তৈরি এই পাহাড়! আমি নিজেও দেখে অবাক হয়েছি। বেলপাহাড়ির অপরূপ এই জায়গা পর্যটকদের কাছে এখনও অজানা। তাই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রঙিন পাহাড়ের পরিচয় করিয়ে দিলাম ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের সঙ্গে। তিনি আরও জানান, আশা করছি আগামীদিনে বেলপাহাড়ির এই রঙিন পাহাড় ঝাড়গ্রামের পর্যটনে নতুন পালক হিসেবে উঠে আসবে। রাজেশ আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি এধরনের পাহাড় বিশ্বে একমাত্র রয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। যেখানে পাহাড়ের উপর সূর্যের আলো পড়লে পাথরের রঙ পরিবর্তন হয়। তবে এই খাদান ডুংরি একেবারেই রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি। যার উপর সূর্যের আলো পড়লে রঙের ছটা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: এবার থেকে শিলিগুড়িতে বেসরকারি হোর্ডিং-এ বাংলা ভাষা, জানালেন গৌতম দেব
বেলপাহাড়ি এলাকাটা এমনিতে পাহাড়, ডুংরি, ঝর্ণার ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সুন্দর। ছোট ছোট পাহাড়, ডুংরি, ঝর্ণা, সবুজ বনভূমি ও পাখির কলরবে বেলপাহাড়ি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ডেস্টিনেশন। এরমধ্যে নতুন আবিষ্কৃত রঙিন পাহাড় এক অন্যমাত্রা যুক্ত হল। যা আগামীদিনে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিস্টদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাহাড় ডুংরি নামে পরিচিত জায়গাটি মায়াবী হয়ে ওঠে সূর্যাস্তের সময়। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঝরনা। সেটির জলেও সূর্যাস্তের সময় রং ঠিকরে বেরোয়। যাঁরা ঝাড়গ্রাম -বেল পাহাডিতে এসে নতুন কিছু দেখতে চান তাঁরা চলে আসতে পারেন এই লোকেশনে। তবে এখানে আসতে গেলে একটু গ্রামবাসীদের সাহায্য নিতে হবে। তারাই পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।