ছবি, সুরা আর আতরের দেশ। শিল্প, কবিতার দেশ। মানবাধিকারের দেশ, ফ্রান্স, তুমি লজ্জায় মুখ লোকাও। মুখ ঢেকে রাখো, কারণ তুমি তোমার সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে পারোনি। তাঁদের চিত্কার শুনে, যন্ত্রণার কথা জেনেও চুপ ছিলে। সোমবার ফ্রান্সের প্রথমসারির ইংরাজি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল এই লাইনগুলিই। ফ্রান্সকে লজ্জায় মুখ ঢাকার কথা বলা হচ্ছে। ফ্রান্সে শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। বছরের পর বছর স্ত্রীর খাবারে মাদক মিশিয়ে লোকজনকে বাড়িতে ডাকতেন ডমিনিক পেলিকট নামে এক ব্যক্তি। টানা ১০ বছর ধরে কমপক্ষে ৮০ জন। ৮০ জনের সঙ্গে স্ত্রীকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন পেলিকট। এবং সেই সব ঘটনা ভিডিয়ো বন্দি করে বিক্রি করেন। এত বছর ধরে নির্যাতন হলেও ডমিনিকের স্ত্রী গিসেল কিছুই বুঝতে পারেননি। কারণ সিএনআইডি নামে ড্রাগ তার শরীরের যাবতীয় অনুভূতি নষ্ট করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Cochbihar News: আন্তর্জাতিক সাহিত্যে কোচবিহারের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা
২০২০ সালে অ্যাডান্ট ভিডিও অনলাইনে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন পেলিকট। বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখনই উঠে আসে গত ২০ বছর ধরে স্ত্রী গিসেলের সঙ্গে পেলিকেট কী, কী করেছেন, কতটা নৃশংসভাবে করেছেন তার বৃত্তান্ত। সবটা শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন গিসেল। তিনিই পুলিশের কাছে দুটি আবেদন করেন। এক, তাঁর নাম যেন প্রকাশ্যে আনা হয়, গোপন রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। দুই, সবার সামনে, খোলা আদালতে যেন মামলার বিচার হয়। এবং সেই বিচারপ্রক্রিয়া যেন লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়। গিসেল স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, তোমরা অবশ্যই সওয়াল – জবাব প্রক্রিয়াটা দেখো। কারণ, তোমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন হবে না, এটা কোনওভাবেই বলা যাবে না।
আরও পড়ুন: Siliguri Sports: শিলিগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
বিচার শেষে গিসেলের স্বামী পেলিকট দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাঁকে ২০ বছরের কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে ফ্রান্সের আদালত। এই খবরের মধ্যেই রয়েছে আরেকটা খবর। সেটা একই রকম লজ্জার। এই তদন্ত চালানোর সময়ই পুলিশ বুঝতে পারে, শিশুদের ব্যবহার করে আপত্তিকর ভিডিয়ো তৈরির চক্রেও পেলিকটের যোগ আছে। পেলিকটের ডায়েরি থেকে কয়েকজন হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির নামও পায় পুলিশ। কিন্তু, যে কোনও কারণেই হোক, এই চাইল্ড সেক্স RACKET নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। একটা এফআইআরও হয়নি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম অভিযোগ করছে, চাইল্ড সেক্স কেলেঙ্কারি চাপতে কভার আপ করেছে ফ্রান্সের সরকার। অর্থাত্ প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনায় সরকারের এই ভূমিকা দেখেই লেখা হচ্ছে, ফ্রান্স, তুমি লজ্জায় মুখ ঢাকো। তুমি তোমার সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে পারোনি। তোমার উচিত মুখ ঢেকে রাখা। এ ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।