নেপালে জুড়ে অরাজকতার ছবি স্পষ্ট। সেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও নানা জায়গা থেকে গোলমালের খবর আসছে। তরুণদের প্রবল বিক্ষোভে দেশছাড়া হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। রাজনীতির এই টালমাটাল অবস্থায় অনেকে আশঙ্কা করছেন, ফের রাজতন্ত্র ফিরে আসতে পারে নেপালে। এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মাঝেই নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে একটি পুরনো ভবিষ্যদ্বাণী, যা ঘুরে ফিরে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুনঃ কয়েক ঘণ্টার মনোমালিন্য! দুপুরে তৃণমূলে রাতেই বিজেপিতে; ‘ঘর ওয়াপসি’ বিষ্ণুপুরের ২ নেতার
প্রশান্ত কিনি নামে এক জ্যোতিষী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাতে তিনি দাবি করেছিলেন, ২০২৫ সালেই নেপালে গণতন্ত্রের পতন ঘটবে এবং দেশ ফিরে যাবে রাজতন্ত্রে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ যেন বাস্তবে মিলে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিনির পুরনো পোস্ট ভাইরাল হয়েছে এবং তিনি নিজেও সেটি রিপোস্ট করে লিখেছেন—“নেপাল সম্পর্কে আমার ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গিয়েছে। ২০২৩ সালে লিখেছিলাম নেপালে গণতন্ত্রের পতন হবে, ফিরবে রাজতন্ত্র।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে নেপালজুড়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অশান্ত নেপালে ইতিমধ্যেই বড় বড় হামলা এবং সহিংস ঘটনার খবর মিলেছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিরোধী দলনেতার বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে লাথি মেরে নালায় ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরে চলছে দাঙ্গা ও ভাঙচুর। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সেনা মোতায়েন করেও শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। গণআন্দোলনের আবহে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কার্যত দিশেহারা।
কিনি শুধু নেপাল নয়, ভারত সম্পর্কেও একটি চাঞ্চল্যকর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর দাবি, ২০৩৯ সালে বিজেপি ক্ষমতা হারাবে, কিন্তু কংগ্রেসও ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। এরপর ভারতে আর কোনও ভোট হবে না এবং গণতন্ত্রের ইতি ঘটবে। অর্থাৎ ৯১ বছরের গণতান্ত্রিক ধারার অবসান ঘটবে। যদিও এই দাবি এখনই কার্যত অসম্ভব ও অবাস্তব মনে হলেও নেপাল নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়ে যাওয়ায় অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
ভারত ও নেপাল ছাড়াও কিনি অন্যান্য দেশ নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ২০২৩ সালেই বলেছিলেন, কাতারের শাসকদল ২০২৫ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রবল টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। ২০২৮-২৯ সালে দেশটিতে ভাঙচুর, সংঘর্ষ, জঙ্গি হামলা এবং আর্থিক কাঠামোর পতন ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলার পর কাতারে অশান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে, ফলে নেটিজেনরা কিনির ভবিষ্যদ্বাণীকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
আরও পড়ুনঃ ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা! অরুণাচল প্রদেশের হিমবাহ গলন
বর্তমান পরিস্থিতিতে নেপালের গণতন্ত্র কার্যত সঙ্কটের মুখে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিশাহীনতা এবং তরুণদের প্রবল আন্দোলন দেশের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশান্ত কিনির ভবিষ্যদ্বাণী একদিকে যেমন আতঙ্ক বাড়িয়েছে, অন্যদিকে নেপালবাসীর মনে গভীর অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে।
*এই খবরটির জন্য বঙ্গবার্তা দায়ী নয়