ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছে মায়ানমার, থাইল্যান্ডের মতো একাধিক দেশ। ভারত থেকে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের মতো এশিয়ার একাধিক দেশে পড়েছে প্রভাব। প্রকৃতির খেলার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাধ্য তো মানুষের নেই। কারণ, কখন প্রলয় আসবে, কখন ভূমিকম্প হবে সেটা আগাম আঁচ করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু, বন্যপ্রাণী বা সমুদ্রের বাসিন্দারা? তাঁরা কি বিপদের আগাম আঁচ করতে পারে? প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছোট-বড় ভূমিকম্প লেগেই রয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্যে সেই কম্পন রেকর্ডও হচ্ছে। কিন্তু, প্রযুক্তির হাত ধরে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা, সেটা এখনও করে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, বন্যপ্রাণীরা? তারা কি প্রকৃতির রোষের আগাম আঁচ করতে পারছে? আগামী দিনে ভয়ঙ্কর প্রলয়ের আগাম সঙ্কেত কি তারা পাচ্ছে? বিজ্ঞানীরা সেই আশঙ্কাই এখন করছেন। কারণ, বিশ্বের নানা প্রান্তে অতিগভীর সমুদ্রীক প্রাণীদের গতিবিধিতেই দেখা যাচ্ছে সিঁদুরে মেঘ।
আরও পড়ুন: ‘ওই যে আকাশের গায়ে’, আরবে দেখা গেল একফালি চাঁদ, ইদ কবে?
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, গভীর সমুদ্রে কিছু একটা চলছে। কেন এই আশঙ্কা? সম্প্রতি স্পেনের ল্যাঞ্জারোট দ্বীপের উপকূলে বিরল প্রজাতির ওরফিসকে দেখতে পাওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিশেষ প্রজাতির মাছকে কেন্দ্র করে চলছে জোর শোরগোল। ওরফিস মূলত অতিগভীর সমুদ্রের মাছ। সাধারণত সমুদ্রের উপরে ওরফিসকে দেখা যায় না। জাপানের লোকজন ওরফিসকে ‘সমুদ্রদেবের বার্তাবাহক’ বলে থাকে। কিন্তু কেন?
২০১১ সালে ফুকুসিমায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। অনেকে বলেন ভূমিকম্পের আগে জাপানের উপকূলে এই মাছের ঝাঁক দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, ভূমিকম্প ও সুনামির আগাম আঁচ করতে পেতেই অতিগভীর জলের মাছ সেই সময় ডাঙায় চলে এসেছিল। প্রশ্ন হল তা হলে কি এ বারও সেই আশঙ্কাতেই উপকূলে পৌঁছেছে ওরফিস? বিজ্ঞানীদের মধ্যে জল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী হিংসায় থমথমে মোথাবাড়ি, বন্ধ ইন্টারনেট, গুজব না ছড়াতে আবেদন পুলিশের
তবে এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে আরও এক সামদ্রিক প্রাণী। তার নাম অ্যাঞ্জেলফিস বা ব্ল্যাক সি মনস্টার। সমুদ্রের বহু গভীরে অন্ধকারেই এদের বাস। সমুদ্রের উপরে ব্ল্যাক সি মনস্টার অ্যাঞ্জেলফিসের দেখা পাওয়া যায় না। অথচ, সম্প্রতি স্প্যানিস এক সংস্থার দাবি, সেই অ্যাঞ্জেলফিসকে প্রথমবার ক্যামেরাবন্দি করেছেন তাঁরা। কারণ, অন্ধকারের এই মাছ সমুদ্রের উপরে উঠে এসেছিল। বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন, কেন এই পরিবর্তন? তা হলে কি সমুদ্রের গভীরে পরিবেশগত কোনও পরিবর্তন হয়েছে? না কি আগাম কোনও বিপদের ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছে এই প্রাণীরা?
আশঙ্কার এই স্রোতে বেগ দিয়েছে আরও একটি ঘটনা। সম্প্রতি তাসমানিয়ার উপকূলে শতাধিক তিমিকে উঠে আসতে দেখা যায়। যাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই পরে মৃত্যু হয়। বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু, সামদ্রিক প্রাণীদের বদলে যাওয়া এই গতিবিধি বিজ্ঞানীদের চিন্তা বাড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সামদ্রিক প্রাণীরা কি প্রলয়ের আগাম আঁচ করতে পারছে? সমুদ্রের চরিত্র কি ক্রমশ বদলাচ্ছে? বিজ্ঞানীরা বলছে, সমুদ্রের পরিবেশ পাল্টাচ্ছে। স্থলভাগে দুষণের কোপ জলভাগেও পড়ছে। সমুদ্রের গভীরের তাপমাত্রা বদলাচ্ছে। তার জেরেই সমুদ্রের ছবি বদল হচ্ছে। পরিবেশ বদল হচ্ছে। সেটা কি বড় কোনও দুর্যোগের সঙ্কেত দিচ্ছে? সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের।