কুশল দাসগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
শাহানাজ পারভিনের হাতের আঙুলগুলি দ্রুতগতিতে চলছে। অর্ডারের ব্লাউজগুলোর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে যে! তারপর দুই ছেলেমেয়েকে খাওয়ানো। আর তারপর পড়তে বসা। রাত অনেকটা হলেও পড়তে না বসে উপায় কী! পরীক্ষা যে সামনেই। শাহানাজ এখন ২৯। ১৮ বছর হতে হতেই বাবা বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। স্বামী দিনমজুর। সংসার সুখের হলেও অপূর্ণতা কোথায় যেন কুরে-কুরে খাচ্ছিল। আর তাই রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। আর এই সূত্রেই স্বপ্নপূরণের স্বপ্ন দেখা, ‘জীবনে পড়াশোনাটা যে কতটা জরুরি তা ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসে টের পাই। পড়াশোনা শেষ না করেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শেষ না হওয়া সেই পড়াশোনাকেই এবারে পূরণ করতে ফের স্কুলে ভর্তি হয়েছি।’ পরের লক্ষ্য, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক।
আর পড়ুন: Darjeeling Zoo: দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় দুজন নতুন অতিথি ” বিশাল” এবং ” কোসি “
এটা শুধুই শাহানাজের গল্প নয়। দিনহাটা ১ ব্লকের বড় আটিয়াবাড়ি গ্রামে এই ছবি এখন বেশিরভাগ ঘরে ঘরে। কম বয়সে বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসে বহুদিন সংসার করার পর অনেকেরই উপলব্ধি, জীবনকে ঠিকঠাক গড়ে তোলার কাজটা সময়মতো করা হয়নি। প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ। তারপর একদিন সব নেতিবাচকতাকে সরিয়ে হইহই করে আশার আলোর খোঁজে নেমে পড়া। সেই খোঁজেই সিরিনা খাতুন দিনভর তাঁর ছোট্ট দোকানটি সামলে রাতে পড়ার বইয়ে ডুবে যান। দিনভর বিউটি পার্লার সামলানো টিংকুর গল্পটাও একই। দেখে সীমা বর্মনের মুখে তৃপ্তির হাসি। সীমাও এই এলাকারই।
আর পড়ুন: Sikkim & Siliguri: সিকিমের বর্জ্য পদার্থ আসছে শিলিগুড়িতে ক্ষেপে লাল মেয়র
প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা হলেও পড়াশোনায় বেশ ভালো। প্রতিকূলতার নানা বাধা পেরিয়ে এখন শিলিগুড়ির সূর্য সেন মহাবিদ্যালয়ে অঙ্কের অধ্যাপক। পাশাপাশি এলাকার ‘রোল মডেল’ও। ‘সীমাদিদি পারলে আমরাও পারব!’ বলে শাহানাজদের উদ্ধুদ্ধ হওয়া। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর রুমা সাহার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সন্তানকে বড় করে তোলার ফাঁকেই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজ পেয়েছিলেন। সেখানে ভর্তি হয়ে স্নাতক হয়ে রুমা এখন অঙ্গনওয়াড়িতে চাকরি করেন। তারপরে সবকিছু স্বপ্নের মত, এবং লড়াই।