সৌরভ দত্ত,কলকাতা:
বুধবার থেকে রাজ্যে বসছে দু’দিনের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পসরা। একদিকে মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালদের মতো শিল্পপতিদের উপস্থিতি, অন্যদিকে বিদেশ থেকে আগত বণিকমহলের উপস্থিতি। বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ নিয়ে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এবার আরও বড় আকারে হতে চলেছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। মোট ৪০টি দেশের ৫০০০ প্রতিনিধি,২০ জন অ্যাম্বাসাডর ও হাই কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। উপস্থিত থাকতে পারেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীও।
আরও পড়ুন: South Dinajpur: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সুস্বাদু মধু এবার গুজরাটে
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত মঙ্গলবারের চা চক্রেই কার্যত শুরু হয়ে গেল শিল্প সম্মেলন। বুধবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। রাজ্যে আরও বিনিয়োগের লক্ষ্যে হাজির শিল্পপতিরাও। রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে এবার নতুন হল এআই হাব। সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে ক্ষুদ্র শিল্প থেকে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প সর্বক্ষেত্রের মানুষ। আলোচনায় উঠে আসবে কৃষিপণ্য থেকে কুটির শিল্প। শিল্প সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে পর্যটনকে। সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সূচনা হবে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের। এবারের বাণিজ্য সম্মেলন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবছর সিআইআই ও ফিকির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসছে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারেই। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের আগেই মুখ্যমন্ত্রী এই দুই বণিকসভার সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে সূত্রের খবর।
তথ্য- প্রযুক্তি, ক্ষুদ্র শিল্প, পর্যটন কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র মিলিয়ে অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলনে অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব আসতে চলেছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। এবারের সম্মেলনে নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্রকে থিম হিসেবে তুলে না ধরে বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রত্যেকটি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে তথ্য-প্রযুক্তি ও ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষেত্র এবার বিশেষ নজর টানতে চলেছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
বুধবার কনভেনশন সেন্টারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টো থেকে। কলকাতায় কার্যত চাঁদেরহাট বসতে চলেছে। প্রথম দিনেই বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলবে গ্লেনারি সেশন। একইসঙ্গে সংলগ্ন বিশ্ব বাংলা প্রদর্শনী কেন্দ্রে চলবে হস্তশিল্প সহ একাধিক প্রদর্শনী সায়েন্স সিটির উল্টোদিকে বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গনেও একাধিক প্রদর্শনী ছাড়াও দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যের শিল্প উদ্যোগীদের আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেও কনভেনশন সেন্টার এবং মেলা প্রাঙ্গণ দুই জায়গাতেই থাকবে একাধিক সেশন।
আরও পড়ুন: Kolkata: পি এস ইউ এর ২৩ তম রাজ্য সন্মেলনের লোগো আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত
নবান্ন সূত্রের খবর, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিনিয়োগের সম্ভাব্য জায়গাগুলির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। আর সেখানেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য বাংলাই যে শ্রেষ্ঠ জায়গা সে বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। কারণ রাজ্যের হিসেব অনুযায়ী এ রাজ্যে তথ্য-প্রযুক্তিতে অন্তত ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে বলে তুলে ধরা হবে। তার জেরে প্রায় এরাজ্যে প্রায় এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলেও প্রশাসনিক মহল সূত্রে অনুমান। তথ্য প্রযুক্তির জন্য নির্দিষ্ট অত্যাধুনিক দুটি ইলেকট্রনিক্স পার্ক, ২৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠছে সিলিকন আইটি ভাব, রাজ্য ডেটা সেন্টার প্রভৃতি তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এমন একাধিক পরিকাঠামো টানেই এখানে ব্যাপক অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। দেশের মধ্যে ক্ষুদ্রশিল্পে বাংলাই শীর্ষস্থানে। আগামীদিনেও এক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ আসা সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ফলে বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে ভাউন্ড্রি প্রকৃতি সমস্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে রাজ্য ঝাঁপাচ্ছে। বস্ত্র শিল্পের জন্য নয়া নীতি ঘোষণা হতে পারে। সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় একাধিক সরঞ্জাম এ রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদন হয়ে থাকে ফলে এই ক্ষেত্রে যাতে রাজ্যে আরও বিনিয়োগ আসে তার উপরেও জোর দেয়া হচ্ছে।
এর আগের সম্মেলনটি হয়েছিল ২০২৩ এর নভেম্বরে। তাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা । লোকসভা ভোটসহ নানা কারণে ২০২৪ সালে বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি ফলে সমস্ত ফ্যাক্টর মাথায় রেখে অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলন বিনিয়োগ প্রস্তাব সপ্তম বাণিজ্য সম্মেলনকে ছাপিয়ে যাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।