১৯৯৮ সালে শেষ বার হয়েছিল কলকাতায়। ২০২৫ সালে মাদুরাইয়ে। ২৭ বছর পর ভোটাভুটি হল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে। কলকাতা কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশগ্রহণ এবং সংগঠনের কমিটিতে মহিলা প্রতিনিধিত্বের বাধ্যতামূলক অনুপাত— এই জোড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল। আর মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে নেতা হওয়ার লড়াই হল। সৌজন্যে মহারাষ্ট্রের সিপিএম নেতা ডিএল কারাড।
পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর হিসাবে প্রকাশ কারাট বিদায়ী কমিটির তরফে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির প্যানেল পেশ করেন। দলীয় নিয়ম অনুযায়ী পৃথক কোনও মত প্রতিনিধিদের রয়েছে কি না, বিকল্প কোনও নামের প্রস্তাব কেউ করতে চান কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। দেখা যায় মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়। কারাড প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য। কিন্তু ভোটাভুটি শেষে কারাটের পেশ করা প্যানেলই জিতেছে। হেরে গিয়েছেন কারাড। তিনি মোট ৩১টি ভোট পেয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রে খবর। পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধি ছিলেন ৭৩২ জন।
আরও পড়ুন: ভরসা সেই কেরল! সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরি হচ্ছেন এম এ বেবি
সিপিএমের ষোড়শ পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল কলকাতার নজরুল মঞ্চে। ১৯৯৮ সালের সেই পার্টি কংগ্রেসের দু’বছর আগে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়েছিল সিপিএম। ওই পার্টি কংগ্রেসে একাংশের প্রস্তাব ছিল—কেন্দ্রীয় সরকারে দলের অংশগ্রহণ করা উচিত। তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। দলে মহিলাদের আনুপাতিক হার নিয়ে প্রস্তাব এনেছিলেন বৃন্দা কারাট। তা নিয়েও ভোটাভুটি হয়েছিল। তবে এ বার কোনও রাজনৈতিক লাইন বা অভিমুখ নিয়ে ভোট হয়নি পার্টি কংগ্রেসে।
এ বার বাংলাতেও দুই ২৪ পরগনার সম্মেলনে ভোটাভুটি নিয়ে বিড়ম্বিত হতে হয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে। উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের এমনই তোড় ছিল যে বিদায়ী জেলা সম্পাদকই ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। তবে পার্টি কংগ্রেসে এই ধরনের ভোটাভুটি সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।
বঙ্গের নতুন পাঁচ মুখ। বাংলা থেকে পাঁচ নতুন মুখ সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এতদিন পলিটব্যুরো ছিলেন মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম আর সূর্যকান্ত মিশ্র। সেলিম, রামচন্দ্র ডোম থাকলেন। বয়সের নিয়মে বাদ গেলেন সূর্যকান্ত। এলেন শ্রীদীপ। বাংলার সদস্যরা ছাড়াও বয়সের কারণে পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তাঁর জায়গায় এলেন ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী।
আরও পড়ুন: সব ধর্মের জন্য একই নিয়ম যোগীরাজ্যে! উত্তেজনা কানপুরে
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকায় রয়েছেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বোস, সমন পাঠক, দেবব্রত ঘোষ ও সৈয়দ হোসেন। সমন, দেবব্রত ও সৈয়দ এখন দার্জিলিং, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক। সিপিআইএমের নিয়মে, এক সঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। ফলে, এই তিন জনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ অনুমতি নেওয়া না কি জেলা সম্পাদক পদে বদল আনা হবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সিপিআইএমের অন্দরে। কারণ ওই তিন জেলা সম্পাদক রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলেন।
অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে প্রজন্ম বদল হল পলিটব্যুরোতে। বাতিল খাতা দেখলেই বিষয়টা খানিক স্পষ্ট হবে। বাদ পড়লেন প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, সুহাসিনী আলি, জি রামকৃষ্ণন, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র। সকলেই ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো থেকে বাদ গেলেন। ব্যতিক্রমী হলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর বয়স হলেও ব্যতিক্রমী হিসাবে রেখে দেওয়া হল।