সেকালের কোলকাতায় সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ চড়ক হত বাগবাজারে। যা ষোলো চড়কির চড়ক নামে খ্যাত ছিল। প্রাণকৃষ্ণ দত্ত ষোলো চড়কির চড়ক নিয়ে লিখে রেখে গিয়েছেন। ষোলো চড়কির ছিল চড়ক রামধন ঘোষের চড়ক। যা শেষবার হয়েছিল ১৮৫৪ বা ১৮৫৫ সালে। বসুবাটীর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে চড়কের আসর বসত। ১৬জন লোকের পিঠ ফুঁড়ে ঝুলিয়ে ঘোরানো হত। সে কারণেই নাম ষোলো চড়কি। মাচানের উপরে আবার একজনকে শিব সাজিয়ে বসানো হত।
আরও পড়ুন: আবার বানানো হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু
বড়বাজারেও চড়ক হত। কোনও কোনও কলকাতা গবেষক মনে করেন, বুড়া বা বড়ো শিব থেকেই বড়বাজার নামটির জন্ম। এই বড়বাজারের চড়ক বিডন স্ট্রিটে উঠে এসেছিল। বিডন স্ট্রিটে চড়ক চালু করার নেপথ্য কারিগর ছিলেন সেকালের বিখ্যাত ধনী রামদুলাল দে সরকার। বড়বাজারে চড়ক বন্ধ হওয়ার পর নতুন বাজারের উলটোদিকের বিশাল মাঠে চড়ক শুরু করেছিলেন রামদুলাল। ইংরেজরা সেখানে পালকি স্ট্যান্ড বানানোয়, চড়কের জন্য নতুন জায়গার দরকার পড়ে। তখন রামদুলাল, নিজের জমিতে বিডন স্ট্রিটের মাঠে চড়ক শুরু করেন। ১৭৮০ সাল থেকে ছাতুবাবু বাজারের মাঠে চড়ক আরম্ভ হয়। ছাতুবাবু ও লাটুবাবু, রামদুলালের দুই ছেলে।
আরও পড়ুন: বাংলা বছরের শেষ দিনে বজ্র যোগে স্বাতী নক্ষত্র, চড়কের আবহেই ভাগ্যের চাকা ঘুরবে এই চার রাশির
প্রায় আড়াইশো বছর যাবৎ বহাল তবিয়তে বিডন স্ট্রিটের চড়ক চলছে। বর্তমান নাম অভেদানন্দ রোড হলেও, এখনও সে রাস্তা বিডন স্ট্রিট নামেই অধিক জনপ্রিয়। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস! কলকাতায় চড়ক বন্ধ করার যাবতীয় উদ্যোগের হোতা ছিলেন ছোটলাট সিসিল বিডন, তাঁর নামের রাস্তায় আজও চড়ক চলছে।