ক’দিন আগে বাংলায় সভা করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেদিন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মোদীকে চরম কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তীব্র শ্লেষের সঙ্গে বলেছিলেন, “বাংলার সিঁদুর বেচতে এসেছেন…আগে নিজের স্ত্রীকে গিয়ে সিঁদুর পরান।” দিদির সেই কথা যেন শলার মতো বিঁধেছিল বিজেপিকে। রবিবার বাংলায় এসে তারই জবাব দিতে চাইলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আরও পড়ুন: সটান ‘ডিগবাজি’ অনুব্রতর! গালাগালি কেষ্ট করেননি, AI করেছে
এদিন নেতাজি ইনডোরে বিজেপির সঙ্কল্প সভা ছিল। সেই সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে অমিত শাহ বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আপনি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ‘জঘন্য’ কথা বলেছেন। সিঁদুরের অপমান করেছেন। মা বোনেরা এর জবাব আপনাকে দেবে।
সিঁদুরের প্রশ্নেই অমিত শাহ বলেন, পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের সন্ত্রাসবাদীদের গুলি করে মেরেছিল। তার জবাবে পাকিস্তানে কয়েকশো জঙ্গিকে খতম করেছে ভারত। “কিন্তু জঙ্গিরা মারা গেলে তো দিদির পেটে ব্যথা করে। আর বাঙালি পর্যটককে যখন জঙ্গিরা হত্যা করে তখন উনি কিছুই বলেন না”।
সংখ্যালঘু তোষণের প্রশ্নে এদিন তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করেছেন অমিত শাহ। তাঁর বক্তৃতার অধিকাংশ সময় জুড়েই ছিল ‘তৃণমূল সরকারের তোষণ নীতি’ নিয়ে সওয়াল-জবাব। অমিত শাহ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই দায়ী। তাঁর কথায়, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য জমি লাগবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইচ্ছে করে জমি দিচ্ছে না। যাতে বাংলাদেশ থেকে লাগাতার মুসলিম অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে এবং তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: দাদার ‘অনুপ্রেরণায়’ এবার আসরে তৃণমূল ছাত্রনেতা; ফের বোলপুরের আইসিকে আক্রমণ
মুর্শিদাবাদ ও মালদহে দাঙ্গা পরিস্থিতির জন্যও তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কথায়, এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সরাসরি শাসক দলের মদতে। শাসক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে থেকে হিংসার উস্কানি দিয়েছেন। এ হল স্টেট স্পনসরড তথা রাষ্ট্রের মদতে দাঙ্গা। অমিত শাহ অভিযোগ করেন, ওখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি বিএসএফের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার তা শুনতে চায়নি। তার পর হাইকোর্টের নির্দেশে বিএসএফ-ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কারণ, বিএসএফ-ই পারে হিন্দুদের বাঁচাতে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও খোঁচা দিয়ে অমিত শাহ বলেন, উনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। অথচ আরজি কর থেকে সন্দেশখালি থেকে সামসেরগঞ্জ—সর্বত্র মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় তৃণমূলেরই নাম উঠে এসেছে বার বার। রাজ্য দুর্নীতির গলা জলে ডুবে গেছে। কেন্দ্রের সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে গত ১১ বছর ৮ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। সেই টাকা বাংলার মানুষ পায়নি। তৃণমূলের সিন্ডিকেট খেয়ে নিয়েছে।
এদিন সভার পরে শুভেন্দু-সুকান্তদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, শাহ তাঁদের জানিয়ে গিয়েছেন, এখন থেকে ঘন ঘন বাংলায় সফরে আসবেন তিনি। রাজ্য সংগঠন কী কী কর্মসূচি নিচ্ছে, কতটা সক্রিয় সব মনিটর করবেন দিল্লি থেকে।