আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চতুর্থ দিনে পড়ল। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, লস অ্যাঞ্জেলসে আরও প্রায় ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও প্রায় ৭০০ মার্কিন মেরিন সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার সকালে ট্রাম্প স্পষ্ট জানান, “এই আন্দোলনকারীরা এবার আগের থেকেও কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়বে।”
আরও পড়ুন: ভয়ে সিঁটিয়ে গেল নাবালক! আইসক্রিমের ভিতরে টিকটিকি!
লস অ্যাঞ্জেলসের একটি ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন শতাধিক প্রতিবাদী। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে, ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ব্যবহার করে। ‘পিগস গো হোম’ স্লোগান তুলে প্রতিবাদীরা মুখোমুখি হন পুলিশের। অনেকে আবার পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ঘটনাস্থলে ছিলেন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরাও।
এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের নির্দেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন পাঠানো হচ্ছে বলে জানায় পেন্টাগন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আরও ন্যাশনাল গার্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছে, তাদের কাজ হবে মূলত সরকারি সম্পত্তি ও অফিস রক্ষায় সহায়তা করা।
তবে এখনই ট্রাম্প প্রশাসন ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ (Insurrection Act) প্রয়োগ করছে না, যা কার্যত সেনাকে সাধারণ আইনের বলবৎকরণে ব্যবহারের অধিকার দেয়। ট্রাম্প বলেছেন, “বিকল্প কিছু ছিল না, হিংসা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল।”
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এইভাবে রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সেনা মোতায়েন আইনবিরুদ্ধ। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড আসছেন লস অ্যাঞ্জেলসে।
আরও পড়ুন: নীলবাড়ির মহালয়ায় মহাজমায়েত! শতবর্ষে বাঙালির জন্য নিয়ম শিথিল সঙ্ঘের
ঘটনা হল, এই ধরনের সেনা মোতায়েন খুব বিরল। এর আগে ২০০৫ সালে হারিকেন কাটরিনা এবং ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে পুলিশের কাজে সেনা ব্যবহার খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতেই লস অ্যাঞ্জেলস দাঙ্গায় ইনসারেকশন অ্যাক্ট (Insurrection Act) প্রয়োগ করে সেনা নামানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় ৫০ জনের বেশি মারা যান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার।
বিক্ষোভের আগুন ছড়াচ্ছে
গত শনিবার থেকেই লস অ্যাঞ্জেলসের রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতেই ট্রাম্প ফের ঘোষণা করেছেন, প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলবে।
রবিবার রাতে বেশ কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ইটপাটকেল ও বোতল ছোড়া হয় পুলিশের দিকে। পাঁচ পুলিশ অফিসার সামান্য আহতও হয়েছেন। এখন শুধু লস অ্যাঞ্জেলসেই নয়, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, সান ফ্রান্সিসকো-সহ আমেরিকার আরও অন্তত ৯টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ।