সৌম্য পালিত:
গতকাল ছিলো খুশির ঈদ। আর সেই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতীয় স্তরের এক বাম নেতার একটি পোস্টকে (পড়ুন ফেসবুক) তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে! কিন্তু ঈদের আগেই আর এস পি’র শ্রমিক সংগঠন ইউ টি ইউ সি-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়াতে ঈদের শুভচ্ছা এবং অভিনন্দন বার্তা পোস্ট করেছেন। এবং সব শেষে লিখেছেন ঈদ মুবারক। প্রশ্ন সেখেনাই। যেখানে বামপন্থী নেতারা কখনোই শারদীয়া দূর্গোৎসব, কালীপুজো, দোলযাত্রার শুভেচ্ছা জানাতে বেশ কিছুটা হলেও নাক সেটকান। সেখানে অশোকবাবু কি করে “ঈদ মুবারক” জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করলেন! এর আগেও আর এস পি দলের যুব সংগঠনের রাজ্য স্তরের নেতাকে মহা কুম্ভে স্নান করতে দেখা যায়। শুধুই কি স্নান! না, মাথায় তিলক পর্যন্ত কাটেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আর এস পি দলের এক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একটু রসিকতা করেই বললেন “আমরা ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে থাকি, আসলে ইনকিলাব জিন্দাবাদের মানে হলো আমি খাবো তুমি বাদ।” এছাড়াও তিনি আরও বলেন “আমরা কি এখনো প্রকৃত কমিউনিস্ট হয়ে উঠতে পেরেছি? না কখনো পারিনি। ৩৪ বছর রাজ্য চালাতে গিয়ে আমাদের মধ্যে থেকে সেই ঔদ্ধত্য এখনো যায়নি। সেই ভাবে জন সংযোগ আমরা করতে পারিনি। ফেসবুকে রাজনীতি না করে আমাদের মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।” আরও এক আর এস পি এর সক্রিয় কর্মী বলেন “নেতারা শুধুমাত্র পার্টি অফিসে বসে থাকে, মাঝে মাঝে একটা দুটো কর্মসূচী গ্রহন করে স্টেজে উঠে বক্তৃতা করতে পারলে আর কিছুই চায় না। শুধুমাত্র সিপিএমের লেজুড় হয়ে থাকতে চায়। অথচ সিপিএম সেই ভাবে আর এস পি কে গুরুত্ব দেয় না। হোয়াটস্যাপ গ্রুপে শুধুমাত্র দলের কর্মসূচী, নেতাদের কথাই বলতে হয়। সমালোচনা করলেই আর রক্ষে নেই। তাহলে মুখে বামেরা মানুষের গণতন্ত্রের অধিকারের কথা বললেও কর্মীদের গণতন্ত্রের দিকটা ভেবে দেখে না।”
আরও পড়ুন: ‘অদক্ষ পুলিশ মন্ত্রী’, পাথরপ্রতিমার বিস্ফোরণের ঘটনায় মমতাকে দায়ী করলেন শুভেন্দু
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবার্তা সরাসরি যোগাযোগ করেছিল তিনজনের সাথে। প্রথম জন আর এস পি নেতা অশোক ঘোষ, দ্বিতীয় বিজেপি নেতা সজল ঘোষ ও সব শেষে সিপিএম নেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সাথে।
বামপন্থী হিসেবে এমন পোস্ট কেনো? উত্তরে ফোনে অশোকবাবু বললেন, “ঈদ একটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, একটি সামাজিক উৎসব। যারা বামপন্থা জানে না তারাই এসব কথা বলেন।” এখানে তিনি কোনো ভুল দেখতে পাচ্ছেন না! তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই মানেন কিন্তু মুখে বলে না বা পোস্ট করেন না। এটা নিয়ে বিতর্কের কোনো বিতর্কের মানে হয় না।”
না, বিতর্ক এখানেই থেমে যায়নি। আরও এক ধাপ এগিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রভাবশালী নেতা পৌরপিতা সজল ঘোষ। তিনি তাঁর চাঁচাছোলা ভাষায় বামেদের তীব্র আক্রমণ শানালেন। তিনি বলেন “আরে দাদা আপনিও সবটা জানেন আর আমি বা আমরা জানি, ওরা (পড়ুন অতি বামেরা) মুখে এরকম বলে। অশোকবাবু সিনিয়র মানুষ। ওনার পোস্ট নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে ধর্মের কথা কি বলছেন? ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে তো ওরা গরুর মাংস খায়!” তাঁর পরিস্কার উত্তর: “সৌম্য’দা তুমিতো আমাকেও চেনো আর ওনাকেও চেনো।
আরও পড়ুন: “দাঙ্গার উস্কানী দাতা টি এম সি” মন্তব্য সুকান্তের
কার কথা বলছি বুঝতেই পারছেন। আরে বিকাশবাবু। ওদের কোনো জাত নেই। ধর্মের কথা না বললেও ওরা (পড়ুন বামেরা) এরকমই।” নতুন প্রজন্মের বামপন্থা কি বদলাচ্ছে? ডিপিতে এসেছে নীল রঙের ছোঁয়া! এনিয়েও কিছুদিন আগে চলেছিল জোর বিতর্ক।” তবে এই ব্যাপারে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য আমরা বিতর্কের আমাদের জানান “দেখুন অশোকবাবু তো ঠিকই বলেছেন। এটা সামাজিক উৎসব। ধর্মকে আপনি এখানে জড়াচ্ছেন কেনো ? কেউ পোস্ট করতেই পারেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।” রাখ ঢাক না করেই সরাসরি প্রশ্ন: “কিন্তু বিকাশবাবু আমি সাজলবাবুর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি আপনার….”প্রশ্ন কেটে বিকাশবাবু বললেন: “হ্যাঁ উনি ঠিকই বলেছেন, আমি তো গরুর মাংস খেয়েছি। তাতে অসুবিধা কোথায়? শুওরের মাংস কি খাওয়া যায় না, না কি ফ্রিজে রাখা যায় না? এতে রাজনীতি বা ধর্মের যোগ কোথায় ? আসলে এটাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
তাহলে কি ধর্মীয় রাজনীতির সরল একটি মেনুকরণ সৃষ্টি হচ্ছে? নাকি “রাম-বামে”র ঠান্ডা লড়াই? প্রশ্নটা কিন্তু থেকে গেলো।