কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই যেন অন্য বাতাবরণ। শাল, পিয়াল, কদমের ছায়াঘেরা পর্যটক আবাসে রবীন্দ্র সংগীতের মূর্ছনা। স্বাগত জানাতে কেতাদুরস্ত কোট–টাই–প্যান্ট পরা অভ্যর্থনা কর্মীরা উধাও। বদলে সবুজ ও ঘিয়ে রঙের ধুতি–পাঞ্জাবিতে বাঙালিয়ানার নমস্কারের সঙ্গে সম্ভাষণ। পয়লা বৈশাখে এমন ভাবেই ভোল বদল ঘটে গেল রাজ্য পর্যটন দপ্তরের বিভিন্ন আবাসে। মেনুতেও বাঙালির সাবেকিয়ানায় জোর দেওয়া হয়েছে। ১৪ পদের বাহারি মেনুতে নিরামিষ থালির পাশাপাশি চিকেন এবং মটন থালিও রয়েছে। শেষ পাতে কাঁচা আমের চাটনি, দই এবং মিষ্টি সহযোগে ভেজ থালি ৫৪৯ টাকা মাথাপিছু। চিকেন ও মটন থালি যথাক্রমে ৬৯৯ এবং ৭৯৯ টাকা। খাবারের পরে কনফারেন্স হলে আরও চমক অপেক্ষারত। এলাকার নিজস্ব মাটির গান, সঙ্গে লোকনৃত্য পরিবেশন করবেন স্থানীয় শিল্পীর।
রাজ্যের মোট ছ’টি কেন্দ্রে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এই বিশেষ আয়োজন একযোগে শুরু হয়েছে। ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে, চলবে নববর্ষের সূচনা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রেজ়ারগঞ্জের বালুতট পর্যটক আবাস, শান্তিনিকেতনের ভুবনডাঙা এলাকায় শান্তবিতান পর্যটক আবাস, বিধাননগরের উদয়াচল পর্যটন কেন্দ্র। দক্ষিণের এই তিন পর্যটক আবাসের সঙ্গে উত্তরের শিলিগুড়ি শহরের মৈনাক টুরিস্ট লজ, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান ঘেঁষা টিলাবাড়ি এলাকায় তিলোত্তমা পর্যটক আবাস এবং জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া অরণ্য পর্যটন আবাসকে এই বিশেষ আয়োজনের জন্য বাছাই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতেও উত্তেজনা! ‘দক্ষ পুলিশকর্তা’কে মুর্শিদাবাদে পাঠালোনা কমিশনারেট
রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার অর্ঘ্য ঘোষ জানিয়েছেন, পর্যটকদের বাঙালিয়ানার ছোঁয়া দিতে এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডুয়ার্সের ‘টিলাবাড়ি’ পর্যটক আবাস ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। দুরন্ত অভ্যর্থনার সঙ্গে ধুতি–পাঞ্জাবি পরিহিত পর্যটন দপ্তরের কর্মীদের মধুর ব্যবহার তো আছেই, রয়েছে সুস্বাদু বাহারি বাঙালি পদ। এই যাবতীয় আয়োজনকে ‘তিলোত্তমা’য় আরো সুন্দর করেছে স্থানীয় ভাওয়াইয়া ও আদিবাসী লোকসঙ্গীত ও নৃত্য।
আরও পড়ুন: ‘প্রয়োজনে পাতাল থেকে খুঁজে নিয়ে আসব…’, হুঁশিয়ারি পুলিশের
‘একবার উত্তরবঙ্গে আসিয়া যান, আমাদের দেশখানা ঘুরিয়া যান’— এই লোকনৃত্যের সমবেত পরিবেশনায় মুগ্ধ পর্যটকেরা। ময়নাগুড়ির এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষা রাকা মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রবাসী মেয়েকে নিয়ে আচমকাই এখানে এসেছিলেন। নববর্ষের এই বিশেষ প্যাকেজে কার্যত অভিভূত তিনি। বললেন, ‘এমন আয়োজনের কথা ভাবতে পারিনি। খুব ভালো লেগেছে। সংক্রান্তি ও বছরের শুরুর দিনেও আসব ভাবছি।’ পর্যটন দপ্তর সূত্রে খবর, শারদোৎসবে এই ধরনের আয়োজন করা হতে পারে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে।