Tuesday, 17 June, 2025
17 June, 2025
HomeদেশPahalgam Terror Attack: ইসলামিক সন্ত্রাস ভয়ংকর, কিন্তু এই হামলার জন্য কেন্দ্র সরকারের...

Pahalgam Terror Attack: ইসলামিক সন্ত্রাস ভয়ংকর, কিন্তু এই হামলার জন্য কেন্দ্র সরকারের কি কোনওই দায় নেই?

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে তাহলে এত বড়ো জঙ্গি হানা হল কীভাবে? সংবাদপত্রেই প্রকাশ পেয়েছে যে, পর্যটনের মরশুমে কাশ্মীরে জঙ্গি হানা হতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ইনপুট ছিল সরকারের কাছে।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

যাকে বলা হয় পৃথিবীর ভূস্বর্গ, যে-অংশটিকে বলা হয় ভারতবর্ষের সুইজারল্যান্ড, সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মানুষের মৃতদেহ । সদ্য বিবাহিতা এক নারী মূক বসে রয়েছেন পড়ে থাকা নিথর তার স্বামীর মৃতদেহের পাশে। এসব দৃশ্য ভোলা কঠিন। ভোলা যাচ্ছেও না। কিন্তু, কেন এমন হল তা কি আমরা তলিয়ে ভাবব না?

একটি কথা প্রথমেই স্পষ্ট করে বলে নেওয়া দরকার যে, মৌলবাদ নিজেই একটি (অ)ধর্ম। সব ধর্মে বিশ্বাসী মানুষেদের মধ্যেই মৌলবাদী (অ)ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজন আছেন। কিন্তু, আজ আগে মানতে হবে যে, এই (অ)ধর্মে দীক্ষিতদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি এবং তারা কাজ করে অনেক বড় আন্তর্জাতিক পরিসরে। মানতে হবে যে, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ আজ গোটা পৃথিবীর কাছেই একটি বড়ো সমস্যা। মানতে হবে যে, এই ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীরাই পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করেছে। আগে কড়া নিন্দা করতে হবে এই ঘটনার। তারপর বলতে হবে কয়েকটি কথা।

প্রথম কথাটি এই যে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে শান্তিপ্রিয় মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা জঙ্গি, তারা সংখ্যায় কম। গোটা পৃথিবীর ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের ধরলে আবার এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। বরং অনেক বেশি। ইসলামিক সন্ত্রাসবাদকে ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির আঙিনায় ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের উপস্থিতি বেশ কয়েকটি দেশকে নানান সুবিধা দেয় বৈকি। তাই একসময় লাদেনেকে সাহায্য করা হয়। পরে লাদেনকেই চিহ্নিত করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সন্ত্রাসবাদী হিসেবে। বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার অবকাশ এই ছোট্ট পরিসরে নেই। এইটুকু জোর দিয়ে বলা অবশ্যই জরুরি যে, পলিটিক্যাল ইসলামের উত্থান একটি রাজনৈতিক ঘটনা। সেই রাজনীতির পরিণাম এই উত্থান–যে-রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করে। একইভাবে স্মরণে রাখা উচিত বিশেষ করে এদেশে পলিটিক্যাল হিন্দুত্বের উত্থানকেও। এই উত্থানও সেই রাজনীতির ফসল যে-রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন: বুক বাজিয়ে মাওবাদী নিকেশের দাবি করলেও কাশ্মীরে জঙ্গি দমনে ছাতি চুপসে যাচ্ছে; তাহলে কি কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র পুরোপুরি ব্যর্থ? 

কথা উঠেছে যে, গতকাল ধর্ম পরিচয় জিজ্ঞেস করে করে হত্যা করা হয়েছে হিন্দু পর্যটকদের। অনেকেই ইতিমধ্যেই বলার চেষ্টা করেছেন যে, এই ঘটনাটি সত্যি নয়। আমি একটি সংবাদপত্রের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করছি: “গুলি বৃষ্টির পরের কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে…সেই ভিডিওই বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল আমার স্বামী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা বলতে থাকে, ‘নাম বোল’। নাম শুনেই এক জঙ্গি অন্য জনকে বলে, ‘আমাদের ধর্মের নয়,’ তার পরই আমার স্বামীর মাথা লক্ষ করে গুলি চালায়।”

স্বামী-হারানো একজন মহিলার জবানবন্দিকে কি অস্বীকার করব আমরা? আবার একই সঙ্গে এও সত্য যে, মৃতদের যে-তালিকা সামনে এনেছে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম, তা থেকে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিহানায় নিহতদের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষও আছেন। রয়েছেন বিদেশিরাও। ইরান এবং ইজরায়েলের পর্যটকরা। সমস্ত কিছু দেখে মনে হচ্ছে, জঙ্গিদের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল বিধর্মী-নিধন। সেই কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন একজন স্বধর্মীও। যে কোনও নাশকতায় এমন ঘটাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই উদাহরণটি দেখিয়ে কিছুতেই এ কথা বলা যাবে না যে, বেছে বেছে হিন্দুদের মারার যে-প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে, তা একটি ন্যারেটিভ এবং নির্মিত।

আরও পড়ুন: কে এই সইফুল্লা! পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী

প্রশ্ন হল, এই হামলা হল কেন? বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা হচ্ছিল একথা ঠিক। কিন্তু মনে হয় সেই উস্কানিই এই জঙ্গি হানার একমাত্র কারণ নয়। যেমন, এই জঙ্গিহানার একটি কারণ ইতিমধ্যেই জঙ্গিহানার দায় নেওয়া দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে। বলেছে, “অন্তত ৮৫ হাজার অকাশ্মীরিকে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট (কাশ্মীরের বাসিন্দার মর্যাদা) দেওয়া হয়েছে। এটা কাশ্মীরের জনবিন্যাসকে বদলে দেওয়ার একটা চক্রান্ত। এই অকাশ্মীরিরা পর্যটক সেজে আসছে, তারপর গেড়ে বসে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট জোগাড় করে এমন হাবভাব দেখাচ্ছে, যেন এই জমি ওদেরই। যারাই এখানে বেআইনিভাবে জাঁকিয়ে বসতে চাইবে, তারাই এমন হিংসার মুখে পড়বে।”

এই বিবৃতিকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। বেছে বেছে অকাশ্মীরি (মূলত হিন্দু) পর্যটকদের নিধনের একটা কারণও এই বিবৃতির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে দায় কার?

দায় অবশ্যই কেন্দ্র সরকারের। কাশ্মীর তো এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এখানে যদি নকল ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ইস্যু হয় তার দায় কেন্দ্রকেই নিতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যে-পর্যটকরা কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছেন তাঁরা বলে চলেছেন, কড়া নিরাপত্তার প্রহরায় ২৪ ঘণ্টা ঘেরা থাকে কাশ্মীর। এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে তাহলে এত বড়ো জঙ্গি হানা হল কীভাবে? সংবাদপত্রেই প্রকাশ পেয়েছে যে, পর্যটনের মরশুমে কাশ্মীরে জঙ্গি হানা হতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ইনপুট ছিল সরকারের কাছে। প্রশ্ন ওঠে, এই ইনপুট পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র দফতর কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে? কেন এই জঙ্গি হানার দায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেবেন না? গত কয়েক বছরে বারবার বলা হচ্ছিল যে, কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদ মুক্ত। এই কি তার প্রমাণ?

স্থানীয় মানুষজনের একাংশের সমর্থন ছাড়া সন্ত্রাসীরা কখনও কাশ্মীরের মতো নিরাপত্তার বলয়ে ঘেরা একটি ভূখণ্ডে সফল অপারেশন চালাতে পারে না। সারা বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে কি না সে খবর রাখার কোনও চেষ্টা কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর করেছে?

একইসঙ্গে এ কথাও সত্য যে, এই হামলার পরেই সাধারণ গরিব কাশ্মীরিদের অনেকেই মোমবাতি মিছিল করেছেন, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই হামলার নিন্দা করেছেন। পর্যটনকে দুমড়ে দিয়ে এই কাশ্মীরিদের পদানত হাতের পুতুল করে রাখার এক বড়ো চক্রান্তের ক্ষুদ্র অংশ নয় তো এই জঙ্গি হামলা? উত্তরগুলো কিন্তু দিতে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীকেও।

আরও একটি কথা বলার। বাংলার বাম সমর্থকদের যে-অংশটি বলছেন যে, এই হামলার সঙ্গে যোগ রয়েছে এসএসসির দুর্নীতি থেকে মানুষের চোখ ঘুরিয়ে দেওয়ার এক বড় চক্রান্তের, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন বলেই মনে হয়। চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থীদের আন্দোলনকে আড়াল করার জন্য না বিচলিত হবে সন্ত্রাসবাদী মুসলিমরা, না নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার। আর এ কথা বললে তো ঘোড়াতেও হাসবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই জঙ্গিহানার দূরতম কোনও সংযোগ আছে।

বাম সমর্থকরা এসব কুযুক্তি যত দেবেন, ততই আসলে পলিটিক্যাল ইসলামের হাত শক্ত করবেন। একইভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা, মুসলিম শিল্পী সাহিত্যিকরা, ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম রাজনৈতিক নেতারা, মুসলিম ধর্মগুরুরা কড়া ভাষায় এই হামলার নিন্দা না-করলে, তাঁরাও পলিটিক্যাল ইসলামের হাত শক্ত করবেন।

কাশ্মীরে পরিস্থিতি আবার কীভাবে স্বাভাবিক হবে জানা নেই। শুধু এইটুকু জানি, কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হলে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের আদর্শ ভূমিকা পালন করলে চলবে না। আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদেরও পলিটিক্যাল  ইসলাম এবং পলিটিক্যাল হিন্দুত্ব– এই দুইয়েরই সমালোচনা করতে হবে। করে যেতেই হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামোটিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে এটাই এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম কাজ।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন