চাকরিহারাদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও মেনে চলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে, এবং সেই নির্দেশ মতোই নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণাকে নিজেদের ‘মৃত্যুপরোয়ানা’ বলে মনে করছেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকশিক্ষিকারা।
সুপ্রিম কোর্ট আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি বহাল রেখেছে ‘যোগ্যদের’। স্কুলে ক্লাস করিয়ে, সংসার সামলে সাত বছর পর আবার নতুন করে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য প্রস্তুতি কী ভাবে সম্ভব, এই প্রশ্ন চাকরিহারাদের প্রায় সকলেরই। শিক্ষকশিক্ষিকাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কারওই আবার পরীক্ষা দেওয়ার মানসিক অবস্থা নেই।’’ সাত বছর এক জায়গায় চাকরি করার পর আবার সেই একই চাকরির জন্য ‘যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে হাতে গোনা কয়েক দিনের মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া কি সম্ভব? প্রশ্ন ‘যোগ্য’দের। বৃন্দাবনদের প্রশ্ন, ‘‘কেন আবার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে? কোর্টও আমাদের সঙ্গে সুবিচার করেনি। সরকারও করল না।’’
আরও পড়ুন: মহাকাশে ভারতের সুরক্ষায় তৈরি হচ্ছে উপগ্রহ-সেনা
প্রথম থেকেই চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকশিক্ষিকাদের দাবি ছিল, তাঁরা আর পরীক্ষায় বসবেন না! পরীক্ষা না-দিয়ে কী ভাবে তাঁদের চাকরি বহাল থাকে তা দেখুক সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানিয়ে দিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩০ মে (আগামী শুক্রবার) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে, রাজ্য সরকারের তরফে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য যে আবেদন ইতিমধ্যেই করা হয়েছে তারও তদ্বির করা হবে শীর্ষ আদালতের কাছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর বৃন্দাবনের বক্তব্য, ‘‘আশঙ্কা যা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হল। আমরা চাইনি সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুক। কিন্তু আজ যে ভাবে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তির কথা জানানো হল, তা দেখে মনে হচ্ছে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’’ তার মতে, ‘‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না-করে পুনর্বিবেচনা আবেদনের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারত সরকার।’’
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী দুই পথের কথা বলেছেন। মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমরা সবটাই রেডি করে রাখছি। যদি রিভিউয়ে বলে যে পরীক্ষা দিতে হবে না, লিস্ট বাতিল করা হল না, তখন সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনব।’’ তবে যদি পুনর্বিবেচনার আবেদনে ‘ইতিবাচক’ নির্দেশ না-আসে, তা হলে পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল হওয়ার রাস্তা খোলা রাখতেই বিজ্ঞপ্তি জারি করছে সরকার, এমনটাই জানান মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বন্ধুর ১৪ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ! এনজেপি-তে শোরগোল
কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, কবে থেকে কবের মধ্যে আবেদন করা যাবে, কবে প্যানেল প্রকাশ বা কাউন্সেলিং— তা অনেকটাই সবিস্তারে জানান মুখ্যমন্ত্রী। চাকরিহারাদের দাবি, সরকার আরও কিছুটা হাতে সময় রেখে আবেদনের তারিখ ঘোষণা করতে পারত। চাকরিহারাদের আক্ষেপ, ‘‘নেতাজি ইনডোরে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের চাকরি বাঁচানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তাঁর কথা শুনে মনে হল উনি ওঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিই রাখলেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবারের ঘোষণা ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া এবং পরবর্তীতে চাকরি হারানোদের জন্য আরও বড় জটিলতার সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘উনি এই ঘোষণা করে আরও বড় জটিলতার মধ্যে ফেললেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করে তাঁদের থেকে টাকা ফেরত নিতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সেটাও সমান্তরাল ভাবে করার কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সে ব্যাপারে কিছু বলেননি। পাশাপাশি তিনি শূন্যপদে নিয়োগের কথা বলেছেন। এর ফলে ২০১৬ সালের চাকরিপ্রাপকেরা আরও বড় আইনি জটিলতায় পড়বেন বলেই আমার অভিমত।’’
অন্য দিকে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে দলের কোনও নেতা যেন বিবৃতি না দেন, এই বিষয়ে তৃণমূলের অন্দরে নির্দেশ জারি হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসসি (মামলা) নিয়ে যা বলেছেন, সেটাই দলের অবস্থান। তাই অন্য কারও এ বিষয়ে মুখ খোলার প্রয়োজন নেই।’’