স্কুল শিক্ষা দফতরের নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম ঘিরে বিতর্ক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি)। একইসঙ্গে এবারের পরীক্ষার নিয়োগ বিধিও জানানো হয়েছে। আর তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ২০১৬ সালে যে নিয়মে পরীক্ষা হয়েছিল, তার বদল হলেই এবার পরীক্ষাও বাতিল হবে। রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। কী বলছেন তাঁরা?
স্কুল শিক্ষা দফতরের নতুন নিয়োগ বিধি নিয়ে বিকাশরঞ্জন বলেন, “যাই করুন না কেন, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালের যে নিয়ম ছিল, সেই নিয়ম মেনেই পরীক্ষা নিতে হবে। তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা এই রাজ্য সরকারের নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিতে তারা বাধ্য। অন্য কিছু করলেই আবার বিপদে পড়বে।” এরপরই তিনি বলেন, “২০১৬ সালের নিয়মের বাইরে গেলেই তা বাতিল হয়ে যাবে। ২০১৬ সালে যে নিরিখে পরীক্ষা হয়েছিল, সেই নিরিখেই পরীক্ষা হতে হবে। দুর্নীতির জন্য ২০১৬-র সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়েছে। সেই চাকরির সুবিধা কেউ পেতে পারে না, এটা বোঝা উচিত।” ওএমআর সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগত জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কৌস্তভের ফেসবুক পোস্টে শুরু তোলপাড়! রণজিৎ ঘোষকেই বিয়ে করেন মমতা? হয়েছিলেন সন্তানসম্ভবাও?
প্রসঙ্গত, স্কুল শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, এবার লিখিত পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের। ২০১৬ সালে যা ছিল ৫৫ নম্বর। ২০১৬ সালে শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ৩৫ নম্বর ছিল। এবার তা ১০ নম্বর। ২০২৫ সালের নিয়োগ বিধিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর রাখা হয়েছে। লেকচার ডেমোস্ট্রেশনের জন্য ১০ নম্বর রয়েছে। এই দুটো ক্ষেত্রে কোনও নম্বর ২০১৬ সালে ছিল না। বিকাশরঞ্জনের স্পষ্ট বক্তব্য, ২০১৬ সালের নিয়মের বাইরে গিয়ে পরীক্ষা নিলেই তা বাতিল হবে।
রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, “এই রাজ্য সরকার ইচ্ছে করে বারবার জটিলতা তৈরি করছে। কারণ এই রাজ্য সরকার চাকরি দিতে চায় না। রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার শূন্য। যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে যোগ্যও রয়েছেন। অযোগ্যও রয়েছেন। যোগ্য ও অযোগ্যদের জন্য একই ব্যবস্থা হতে পারে না। কিন্তু, এই রাজ্য সরকার ঘুরপথে এই ডেমোস্ট্রেশনের নম্বর ও মৌখিকের নম্বর বাড়িয়ে যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যদেরও চাকরি পাইয়ে দিতে চাইছে। কারণ অযোগ্যরা টাকা দিয়েছে। অযোগ্যদের বাঁচানোর জন্য প্রচেষ্টা চলছে। যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা আদালতে দিয়ে দিলেই সমস্যা হত না। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থাকে অন্তর্জলি যাত্রায় পাঠানো হয়েছে।”
আরও পড়ুন: টাকার বৃষ্টি! আকাশে উড়ছে ৫০০, ২০০, ১০০ টাকার নোট
নতুন নিয়ম নিয়ে সরব হয়েছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “নিয়োগ বিধিতে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। চাকরিহারারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন। যাঁরা নতুন পরীক্ষার্থী, তাদের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা হবে। এসএসসি ইচ্ছে করলে কাউকে বেশি নম্বর কিংবা কাউকে কম নম্বর দিতে পারে। আমরা বুঝতে পারছি না, সরকার নতুন করে কোনও জটিলতাকে আহ্বান করছে কি না। আমরা আশঙ্কা করছি, এর ফলে আবার যদি মামলা হয় আদালতে এবং নিয়োগ আটকে যায়, ক্ষতি হবে রাজ্যের। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। সার্বিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি হবে। নতুন নিয়োগ বিধিতে কিছু ফাঁকফোকর এবং বিতর্কিত বিষয় রয়ে গেল। এগুলো না থাকলেই ভাল হত। এটাকে আমরা অবাঞ্ছিত বলে মনে করছি।”