নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি:
মহানন্দার চরে বৈশাখীমেলা বসানো নিয়ে তৃণমূলের অন্তঃকলহ প্রকাশ্যে চলে এল। গত বছর দলের এক মেয়র পারিষদের নেতৃত্বে এই মেলার অনুমতি চাওয়া হলে সরাসরি মেয়র অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু এবার মেয়র-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে মেলার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে শাসকদলের অন্দরে। অবশ্য মেয়র গৌতম দেবের দাবি, ‘মেলার উদ্যোক্তারা অনুমতি চেয়েছেন। তাঁদের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে। সেইসব শর্ত পালন করতে পারলে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে কোনওভাবেই এক মাসের বেশি মেলা করা যাবে না।’ গত বছর মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি কেন, সেই প্রশ্নে মেয়রের জবাব, ‘বিষয়টি দেখতে হবে।’ আবার স্থানীয় কাউন্সিলার কমল আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘এখানে কোনও কর্মসূচি হলে উদ্যোক্তারা আমার কাছে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নেন। কিন্তু এবার বৈশাখীমেলা কমিটি আমার কাছে এনওসি চায়নি। আমি ঠিক করেছি, আর কাউকেই এখানে কোনও কর্মসূচি করার জন্য এনওসি দেব না। কেননা ওটা নদীর চর।’
আরও পড়ুন: যানবাহনের হর্নে এবার সানাই-বাঁশি-তবলার সুর
দীর্ঘদিন ধরে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সূর্য সেন পার্কের পিছনে মহানন্দার চরে পৌষমেলা হয়ে আসছে। সেখানে মাঝেমধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টও হয়। ২০২৩ সালে ওই মাঠেই প্রথম বৈশাখীমেলা বসে। সেবার মহানন্দা নদীর চরের এই মেলা ভালো ব্যবসা করেছিল। ফলে গত বছরও মেলা করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু গতবার মেলার অনুমতি মেলেনি। সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র পারিষদ দিলীপ বর্মনের মাধ্যমে মেয়রের কাছে এই মেলার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। সেবার মেলার পিছনে দিলীপেরও আর্থিক লগ্নির ইচ্ছা ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু মেয়র সরাসরি সেই আবেদন বাতিল করে দিয়েছিলেন। ফলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল মেলার উদ্যোক্তাদের। কিন্তু এবার মেয়র-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা বিপ্লব সরকার এই মেলার অনুমতি চেয়েছেন। অনুমতি যে মিলছেই তা ধরে নিয়ে মেলার প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রচারপত্রে ওই তৃণমূল নেতার নাম, মোবাইল নম্বর দিয়ে স্টল বুকিং ও স্পনসরশিপের জন্য আবেদন পর্যন্ত করা হয়েছে। আর এতেই চটেছেন দলের একাংশ। যদিও মেয়রের দাবি, ‘এখনও মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং, নির্দিষ্ট সময় মেনে মেলা করা সহ সব শর্ত পূরণের অঙ্গীকারপত্র পাওয়ার পরই অনুমতি দেওয়া হবে।’
এই মেলা নিয়ে এখন তেলেবেগুনে জ্বলছেন মেয়র পারিষদ দিলীপ বর্মন। বৈশাখীমেলার প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁর চোখেমুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। তাঁর কথায়, ‘এখনই কিছু বলব না। আগে মেলাটা শুরু হোক, তারপরেই যা বলার সবাইকে ডেকে বলব।’ বৈশাখীমেলা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে যে কোন্দল শুরু হয়েছে, তা দিলীপের ভাবভঙ্গিতেই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসের ‘রক্তাক্ত নজর’ পড়ল পর্যটকদের উপর; জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি, নিহত দুই
শহরের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের প্রশ্ন, গত বছর যদি মেলার অনুমতি না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এবার কেন অনুমতি দেওয়া হল? মেয়র কি নিজের কাছের লোক বলে বিপ্লবকে মেলা করার অনুমতি দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মেয়র অবশ্য বলছেন, এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাহলে উদ্যোক্তারা কীভাবে প্রচার শুরু করে দিলেন, সেই প্রশ্নও দলের অন্দরে উঠছে।