আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বৃহস্পতিবার রাতে পাক বিমানহানায় নিহত হয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর প্রধান নুর ওয়ালি মেহসুদ এবং সহকারী প্রধান কারি সাইফুল্লাহ মেহসুদ। সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে শুক্রবার এই দাবি করেছে পাক সংবাদমাধ্যম ‘পাকিস্তান ওবসার্ভার’।
আরও পড়ুনঃ ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল; হামলা পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের?
প্রকাশিত খবরে দাবি, সুনির্দিষ্ট তথ্য ভিত্তিতে কাবুলে টিটিপি (পাক সরকার এবং সেনা যাদের ‘ফিতনা আল খোয়ারিজ়’ বলে চিহ্নিত করে)-র ডেরায় বিমানহানা চালানো হয়। এর পাশাপাশি, শুক্রবার পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর তরফে আফগানিস্তান সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৩০ জন টিটিপি বিদ্রোহীকে হত্যা করার দাবি করেছে। ওই বিদ্রোহীরাই বুধবার আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কুররমে হামলা চালিয়ে এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং এক মেজর-সহ ১১ পাক সেনাকে খুন করেছিল বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে পর পর কয়েকটি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আফগানিস্তানের রাজধানী। ঘটনাচক্রে, আফগান তালিবান নেতা তথা সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ছ’দিনের ভারত সফরের গোড়াতেই এমন ‘হামলা’ হল কাবুলে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, রাত দশটার কিছু আগে অন্তত দু’টি জোরাল বিস্ফোরণ ঘটেছে কাবুল শহরের প্রাণকেন্দ্রে। আফগান সরকারের মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদও এক্স পোস্টে বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত তথ্য পরে দেওয়া হবে। যদিও তালিবানের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে দাবি, পাকিস্তানি বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান বা ড্রোন হামলার কারণেই এই বিস্ফোরণ। ওই খবরে দাবি, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সক্রিয় টিটিপি বিদ্রোহী বাহিনীর কয়েকটি ডেরা রয়েছে কাবুলে। সেগুলিকেই নিশানায় করেছে পাক বায়ুসেনা।
আরও পড়ুনঃ ১৫ জন স্ত্রী, ৩০ সন্তান ও ১০০ জন ভৃত্য! ভাবা যায়
আমেরিকায় ড্রোন হামলায় নিহত জঙ্গিনেতা বায়তুল্লা মেহসুদ প্রতিষ্ঠিত টিটিপি বরাবরই পাক সরকারের বিরোধী। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে তারা। ভারত এবং আফগানিস্তানের শাসক তালিবানের একাংশ থেকেও তার মদত পাচ্ছে বলে ইসলামাবাদের অভিযোগ। এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ লাগোয়া আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে হামলা চালিয়েছিল পাক বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। ইসলামাবাদের দাবি, টিটিপি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। যদিও আফগান তালিবানের অভিযোগ, বারমাল জেলায় লামান-সহ সাতটি গ্রাম লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল মহিলা, শিশু-সহ ৪৬ জন সাধারণ মানুষের।
২০২১-এর ১৫ অগস্ট তালিবান আনুষ্ঠানিক ভাবে কাবুল পুনর্দখল করেছিল। আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার তালিবানি শাসন কায়েম হওয়ার পরেই সে দেশে পাততাড়ি গুটোতে শুরু করে আমেরিকা। প্রাথমিক ভাবে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকলেও আফগান তালিবান ঔপনিবেশিক জমানার ডুরান্ড লাইনকে ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণের বিরোধিতা করার পরেই সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করেছিল। অন্য দিকে, ক্রমশ নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের। এই পরিস্থিতিতে পাক সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এখন আফগানিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএসকে) এবং লশকর-এ-ত্যায়বার মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলে বালোচ এবং টিটিপির মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে।